রাস্তার পাশের ফুটপাতে পাটের বস্তা বিছিয়ে একটি বাক্স নিয়ে বসে আছেন শারিরিক প্রতিবন্ধী হরিপদ দাস। সঙ্গে রয়েছে সুই সুতা, চিমটে, নেহাই, কাঠের তক্তা, চামড়া, সুতা-চামড়া কাটার যন্ত্র আর রং (কালি)। ওইসব দিয়ে ছেড়া জুতা সেলাই আর রং বা কালি দিয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি করে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় চারঘাট পৌর শহরের আড়ানী রোড এলাকায়।
রাস্তার এক কোনে বসে বেশ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এ কাজ করে আসছেন হরিপদ দাস। শারিরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতে পারেন না তিনি৷ দুই হাতের উপরে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। অন্যের ছেড়া জুতা নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সেলাই আর রং কালি দিয়ে পরিপাটি করে দিলেও তাঁর নিজের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অভাব অনটনে পরিবার পরিজন নিয়ে চলছে তাঁর জীবন।
সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে কথা হয় হরিপদ দাসের সাথে। তিনি জানান, বাপ-দাদারা জুতা সেলাই করতেন তাদের পরে আমিও একই পেশায় কাজ করছি। ১৫ বছর বয়সে স্বাধীনতার আগে এলাকায় ঘুরে ঘুরে জুতা-সেন্ডেল সেলাই করতাম। পরবর্তীতে শারিরিক সমস্যা বেড়ে গেলে আর চলাফেরা করতে পারিনা। হাতের উপর ভর দিয়ে আড়ানী রোডে আসি, এখানেই সারাদিনে যা আয় হয় তা নিয়ে বাড়ি ফিরি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকা মুচি পাড়া হিসাবে পরিচিত। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মুচি পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে যারা ছোট বেলা থেকে মুচি হিসেবে কাজ করে আসছেন অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না শুধু তারাই পুরোনো পেশা ধরে রেখেছেন। তবে তাঁদের বেশির ভাগই চান না সন্তানরাও এই কাজ শিখুক। এ অবস্থায় আমরা কয়েকটি পরিবার এখনো এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছি।
হরিপদ দাস বলেন, এই পেশায় কাজ করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন সংসার চলেনা। মানুষের এখন টাকা হয়ে গেছে, কেউ ছেঁড়া জুতা সেলাই করে পায়ে দেয় না। সারাদিনে ২শ টাকার কাজ করাও কঠিন হয়ে যায়। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। সারা দিন কাজ করেও বাড়িতে যাওয়ার সময় চাল ডাল নিয়ে যেতে পারি না।
উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ব্রজহরি দাস বলেন, হরিপদ দাসের মত মানুষরা আমাদের সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠী। আমরা তাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছি। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো ফান্ড নেই। তবে তারপরও তারা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সুবিধা যেনো পায় এজন্য আমরা তাদের পাশে রয়েছি।