শীত মানেই পিঠা। গ্রামীণ জনপদে শীত এলেই ঘরে
ঘরে শুরু হয় পিঠার ধুম। কিন্তু ব্যস্ত শহরে এই পিঠার স্বাদ পেতে
দ্বারস্থ হতে হয় ফুটপাত অথবা কোন পিঠার দোকানে। তাই বাঙালির ঐতিহ্যকে
ধরে রাখতে শেরপুর পৌর লেডিস ক্লাব আয়োজন করেছিল দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। গত
৪ বছর ধরে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হলেও করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ
ছিলো আয়োজন। দীর্ঘদিন পর এ উৎসবের আয়োজন হওয়ায় উপচে পড়া ভীড় ছিলো
পিঠা উৎসবে।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) শেরপুর পৌরসভা কার্যালয় মাঠে এ পিঠা উৎসর ফিতা
কেটে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ। এর আগে পৌর মিলনায়তনে এক
সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ
চৌধুরী, পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন, লেডিস ক্লাবের সভাপতি শাহনা
আক্তার পারভীন, সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমানারা লিপি, ডিসি পত্নী জান্নাতুল
ফেরদৌস প্রিয়া, পুলিশ সুপার পত্নী ও পুনাক সভাপতি কাজী মোনালিছা
মারিয়া, হুইপ পত্নী শান্তা রহমানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নারী
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পিঠা উৎসবে নানা রঙ ও ঢংয়ের বাহারি পিঠার নামের মতো দর্শনার্থীদের মন
কেড়েছে স্টলগুলোর বাহারি নানাসব নামে। বিভিন্ন ফুলের নামে বিশেষ করে
কেয়া, মাধবীলতা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, ক্যামেলীয়া, হাসনাহেনা, অপরাজিতাসহ
নানা বাহারি নাম। উৎসবে ১৫ টি স্টলে হৃদয় হরণ, মেরা দিল, দুধ চিতই,
সাগুর লস্করা, নয়নতারা, ডালের বরফি, হেয়ালি পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেল
পুলি, দুধ পুলি, তালের পিঠা, মাছ পিঠা, মালপোয়া, ঝালপোয়া, সুজির পিঠা,
মাংসের সমুচা, ডিম পিঠা, মুগ পাকান, পুডিং, পায়েস, পানতোয়াসহ প্রায় এক
শত রকমের বাহারি নামের পিঠা বিক্রি ও প্রদর্শিত হয়।
পিঠা উৎসবে বড়দের পাশপাশি শিশু-কিশোররাও বেশ আনন্দ উপভোগ করেছে। অনেকইে
সরাসরি উৎসব মাঠে গরম গরম পিঠা তৈরী করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। পিঠার
পাশাপাশি হাঁসের মাংস ও চালের রুটিও বেশ বিক্রি হয় কয়েকটি স্টলে।
উৎসব শুরু হয় বিকেল ৪টায় আর শেষ হয় রাত ৮ টায়। এ সময় শহরের বিভিন্ন
শ্রেনীর মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে কেউ বা আবার বন্ধুদের নিয়ে দলে দলে
ভির করে পিঠা উৎসবে। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টল পরির্দশনের পাশপাশি বিভিন্ন
স্টলের নানাসব বাহারি পিঠার মজা উপভোগ করেন।
পিঠার স্টলগুলোতে বিক্রিও হয় বেশ। বিশেষ করে দেশীয় পাটিসাপ্টা, সংসারী,
পেয়া, দুধ-চিতই ও চিতই পিঠার পাশাপাশি হৃদয় হরণ, মন কারা, কুমারী পিঠা,
বৌ-পিঠা, সাথী পিঠা নামে পিঠার বেশ কদর ছিল। জেলার বিভিন্ন নারী সংগঠনের
নেতৃবৃন্দ ও সৌখিন পিঠা প্রেমী নারীরা পিঠা উৎসবের স্টলে তাদের বাহারি
পিঠার সমাহার নিয়ে বসেন। পিঠা উৎসবের এ সময়টা যেন বন্ধু-বান্ধব আর
প্রিয়জনদের মিলন মেলায় পরিনত হয়। অনেকে দল বেঁধে বন্ধুদের নিয়ে সেলফি
তোলাতেও মেতে উঠে। আয়োজকরাও এ উৎসব প্রাণের উৎসব হওয়ায় বেশ খুশি।
আয়োজকদের উপদেষ্টা পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন বলেন, বাঙালির
ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব যাতে হারিয়ে না যায় তাই আমরা এ ঐতিহ্যকে ধরে
রাখতে এখন থেকে প্রতি বছর নিয়মিত ভাবে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হবে। এ
ধরনের পিঠা উৎসব আগামীতে আরো বড় পরিসরে আয়োজন করার আশা ব্যক্ত করেন।
শেরপুর জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, কোভিটের কারণে আমরা বাঙালীরা দুই
বছর সকল উৎসব থেকে বঞ্চিত ছিলাম। সে অবস্থা কিছুটা কাটিয়ে আজকের এই
উৎসবটা বেশ জমজমাট হয়েছে দেখলাম এবং বাঙালীর হরেক রকমের পিঠার সমাহারও
ছিলো স্টলগুলোতেও। এজন্য আয়োজকদের বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই এবং
আগামীতেও যেন এর ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকে সে আশা করি।