বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আকাশ-জমিন তফাৎ বিদ্যমান। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকরিজীবন শেষে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এককালীন টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পাওনা ছুটি, মাসিক পেনশন ও গ্র্যাচুইটির সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুবিধা ঠিক সে রকম নয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের পর ‘অবসর সুবিধা’ ও ‘কল্যাণ সুবিধা’Ñএই দুই ধরনের সুবিধা পান। বয়স ৬০ বছর অথবা চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যান। তবে কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবার নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। আবার অন্তত ১০ বছর পূর্ণ করে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলে জমার টাকা সুদসহ পাওয়া যায়। এটাই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের নিয়ম।
জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ অবসর সুবিধা ফান্ডে জমা দেন। চাকরিজীবন শেষে তাঁদের পাওনা পরিশোধ করা হয়। অবসর সুবিধা বোর্ডে প্রতি মাসে অবসরে যাওয়া প্রায় ৮০০ শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন জমা পড়ে। এজন্য প্রায় ৯০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। প্রতি মাসে ৬ শতাংশ জমা করা টাকা থেকে আসে ৬৫ কোটি টাকা। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি প্রায় ২৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিবছর জমা করা ৯ হাজার ৬০০ আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন এক হাজার ৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি থাকে ৩০০ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন এই ঘাটতি জমা হতে হতে ৩০ হাজার শিক্ষকের আবেদন জমে আছে।
বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা শুরু হয় ২০০২ সালে। শুরুর দিকে তা ছিল চরম অবহেলিত। ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছরই প্রধানমন্ত্রী এই বোর্ডের জন্য অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই বোর্ডকে মোট এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিডমানি বা স্থায়ী আমানত হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা। আর থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮২২ কোটি টাকা। সিডমানি থেকে প্রতি মাসে তিন কোটির কিছু বেশি টাকা পাওয়া যায়, যা দিয়ে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রদান করা হয়। ২০১৬ সালে দেওয়া ৬৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৫০০ কোটিই ছিল স্থায়ী তহবিল। ২০১৭ সালে ১০০ কোটি ও ২০১৮ সালে ৫৩২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অবসর ভাতা পেতে অপেক্ষমাণ ৩০ হাজার শিক্ষকের জন্য তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিপরীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে এককালীন এক হাজার টাকা চেয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছরের জাতীয় বাজেটে যাতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে তারা। অপেক্ষমাণ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবসরের পর যাতে যথাসময়ে তাঁদের অবসর ভাতা পান, সে ব্যাপারে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা।