শিক্ষাবিদ খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ:) ছিলেন অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা বিভাগের সহকারি পরিচালক (১৯২৪-১৯২৯)। তিনি বিভাজনপূর্ব ভারতে শিক্ষা বিভাগে পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরসহ অসংখ্য সংস্কার সাধন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন ছিল খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লার অসামান্য অবদান। ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে তুমুল বিতর্ক শুরু হয় তখন একমাত্র মুসলিম সিনেটর হিসেবে আহ্ছানউল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অকাট্য যুক্তি দেখান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নে আহ্ছানউল্লা প্রাজ্ঞ ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে দীর্ঘ টানা দশ বছর তিনি সেখানকার সিনেটর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আইনসমূকে বাস্তবতার নিরিখে সমন্বয় করেন। ১৮ ডিসেম্বর, রাজধানীর উত্তরায় নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন সম্প্রসারিত কার্যক্রমের নিজস্ব প্রাঙ্গণে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর ১৪৮তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক এবং স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী এবং নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক-এমপি। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ব্রিট্রিশ আমলে বাঙালি মুসলমান যখন শিক্ষায়-দীক্ষায়-জ্ঞানে-প্রজ্ঞায় পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে নিগৃহীত ছিল তখন রেনেসাঁ পুরুষের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছিলেন খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ:)। শিক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে অবিভক্ত বাংলায় তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতায় প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়। অল্প বয়সেই তিনি ব্রিটিশ লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো মনোনীত হয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সম্প্রসারিত কার্যক্রম এই সেমিনারের অয়োজন করে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের কার্যনির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নলতা শরীফ আহ্ছানিয়া মিশন মহিলা এতিমখানার সভাপতি ফরিদা রহমান খান। আলোচনায় অংশগ্রহন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবু তৈয়ব আবু আহমদ, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়ামিশন, সম্প্রসারিত কার্যক্রমের, ঢাকা সমন্বয়ক ও খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এ এফ এম এনামুল হক, গুলশান জামে মসজিদের খতিব হাফেজ হাফিজুর রহমান, ঢাকা মহানগর শিক্ষক সমিতির সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ প্রমুখ।
বক্তারা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করেন। আহ্ছানউল্লার ১৪৮তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এতিমখানা প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিনামূল্যে চক্ষু, অর্থপেডিক ও গাইনী চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালিত হয়। সেখানে আগত রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ সরবারহ করে আহ্ছানিয়া মিশন।