ইউনিয়ন পরিষদের চলমান নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপের তফসিল গত ১৮ নভেম্বর ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি ২১৯ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৮ টি। এর মধ্যে ছ’ধাপে ৩ হাজার ৯৯২ টিতে ভোট হচ্ছে। বাকি ইউনিয়নগুলোতে মেয়াদ পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে পরে ভোট হবে। কিন্তু চলমান নির্বাচনে প্রতিদিনই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এসব সংঘর্ষে দেশি অস্ত্র থেকে শুরু করে গোলাগুলির ব্যবহারও হচ্ছে। ফলে রক্ত ঝরছে, ঘটছে প্রাণহানি। গত ৪ মাসে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৬৬ জনের। আহত হয়েছেন অসংখ্য। বাদ যায়নি বসতবাড়িতে হামলা, পথে ঘাটে প্রহারের মত ঘটনা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৫ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩০ জন এবং তৃতীয় ধাপে ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৭ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। মূলত: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই এসব সংঘাতে জড়াচ্ছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষ বেশি ঘটছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য এখন জনসেবার মাধ্যমে জন সম্পৃক্ততায় ব্যস্ত না হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। দু:খ জনক হলেও সত্য; নির্বাচন কমিশন এসব সংঘর্ষ ঠেকাতে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে নি। বরং উল্টো ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়াতে চাইছেন। অন্যদিকে সচেতন সমাজ মনে করে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটু সচেতন হলেই অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতো। যদিও আকস্মিক সংঘর্ষগুলো ঠেকাবার কোন সুযোগ থাকে না।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই বলে আসছে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং আগামীতে দলীয় কোন পদ পদবী দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে মনোনয়নও দোয়া হবে না। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্রোহী কিছু প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক এলাকায় দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। অবশ্য দল কিছু এলাকা উন্মুক্ত রেখে দলীয় মনোনয়ন কাউকে দেয় নি। ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ-সংঘাতের কারণে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে বলেই খালাস। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সব সময়ই উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখন নির্বাচন আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। সংঘর্ষ-সংঘাত ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে হুমকি-ধামকি চলছে লাগামহীন ভাবে। প্রচার মিছিলে হামলা নিত্য দিনের ঘটনা। তাই আতংকের এ নির্বাচনে আর কোনো প্রাণহানি আমরা দেখতে চাইনা। দেখতে চাই না রক্তক্ষরণের কোনো ঘটনা। তাই নির্বাচন কমিশন তাদের শীত নিদ্রা ভঙ্গ করে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কারীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মনে রাখতে হবে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এটাই শেষ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সহিংস ঘটনার কারণে কমিশন সব সময় নিন্দিত হবে। কথায় আছে না, শেষ ভালো যার সব ভালো তার।