দুর্ভোগ ও আতংকের বোধ হয় আর শেষ হল না। কোভিড-১৯-এর ভয়াল গ্রাসে গত দু’বছর বিশ্ব নাকানি-চুকানি খেয়েছে। যখন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিল, সীমিতভাবে হলেও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তখন আবার দু:সংবাদ। নবরূপে আবির্ভূত হয়েছে করোনা ভাইরাসের নূতন সংস্করণ যার নামকরণ করা হয়েছে ‘ওমিক্রন’। প্রাথমিকভাবে এর বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছিল বি.১.১.৫২৯ হিসেবে। গত ২৪শে নভেম্বর ২০২১ দক্ষিণ আফ্রিকার বৈজ্ঞানিকেরা এটিকে সনাক্ত করেছেন, পরের দিন অর্থাৎ ২৪শে নভেম্বর বিশ্ববাসীর কাছে এটি প্রকাশ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরু হয় উদ্বেগ আর আতংক। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ করেকটি আফ্রিকান দেশের সাথে যোগাযোগ সীমিতকরণ, ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা, ফ্লাইট বাতিল, বিমান বন্দরে স্ক্রীনিং, করোনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনসহ নানা রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। বিশ্ব আর চায় না নূতন করে করোনা ভাইরাস আবার ছড়িয়ে পড়–ক। অথচ ইতোমধ্যে ৯০টি দেশে ওমিক্রণ সনাক্ত করা হয়েছে। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বতসোয়ানা এবং এরপর ইসরাইল, বেলজিয়াম ও হংকং-এ সনাক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে শুরু হয় বিস্তার। এক সপ্তাহের মাথায় ২০/২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে এপর্যন্ত ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দুইজন সনাক্ত হয়েছে। ওমিক্রনের বিস্তার ও ভয়াবহতা যাই হোকনা কেন এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যুর খবর তেমন পাওয়া যায়নি। গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেন।
ইতালী বর্ণমালার ১৫তম বর্ণ ওমিক্রন, ইংরেজী বর্ণ ‘ঙ’ এর মত। আলফা (অ), বেটা (ই), গামা (এ), ডেল্টা (উ) .... এভাবে ওমিক্রন ১৫তম বর্ণ যা একটি ভাওয়েল (ঠড়বিষ)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতালী বর্ণমালা দিয়েই করোনা ভাইরাসকে নাম করণ করেছে। ১৫তম বর্ণের আগের দুটি বর্ণ বাদ দেয়া হয়েছে বিভ্রান্তি (ঈড়হভঁংরড়হ) এড়ানোর জন্য। বর্ণ দুটি হল- দঘঁ' ওদঢর'. ঘঁ-কে ঘব-িএর মত উচ্চারিত হতে পারে বলে বাদ দেয়া হয়েছে। আর ঢর সাধারনত: নামের অংশ, আগে বা পরে হতে পারে। এছাড়া, চীনা প্রেসিডেন্টের নাম ঢর এরহঢ়রহম. তাই কোন রোগের নামের সংগে ঢর-কে জড়ানোটা হু সংগত মনে করেনি। তাই ১৩তম ও ১৪ম বর্ণ দুটি বাদ নিয়ে ‘ঙ’ অর্থাৎ ঙসরপৎড়হ-কে নেয়া হয়েছে। ওমিক্রন হল মূলত: সার্স-কভ-২(ঝঅজঝ ঈড়া-২) যার সংক্রমনে কভিড-১৯ হয়। করোনার আলফা ভ্যারিয়েন্ট বা সংস্করণ বা ধরণ ১৯২০ সালের শেষদিকে বৃটেনে শনাক্ত হয়। এরপরই বেটা ধরণ দেখা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যপী ডেল্টা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। মনে করা হয় ৪ নভেম্বর ২০২১ থেকে ওমিক্রন সংক্রমণ শুরু হয়। তবে ৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ৯ নভেম্বর বতসোয়ানায় নূতন নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয় যে এটি করোনার নতুন ধরণ। ২৫ নভেম্বর ২০২১ এর আফ্রিকা হু-কে অবগত করে। আফ্রিকার বাইরে হংকং-এ প্রথম সংক্রমণ দেখা দেয় আফ্রিকা থেকে আগত জনৈক যাত্রীর মাধ্যমে এবং একই হোটেলে অবস্থানকারী আরেক যাত্রীকেও সংক্রমণ করে। ২৫ নভেম্বর মালাবী থেকে আসা এক যাত্রীর মাধ্যমে ইসরাইলে প্রথম সংক্রমণ দেখা দেয়। এভাবেই ছড়াতে থাকে ওমিক্রন। দেখা গিয়েছে যে পূর্বে টিকা দেয়া ব্যক্তিও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছে। তবে তা মারাতœক হয়নি। ১১ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশে প্রথম সনাক্ত হয় জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটার সক্রামিত হয়।
ওমিক্রন সম্বন্ধে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) জানিয়েছে যে, অন্ততঃ দু’সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে এর সংক্রমণ ক্ষমতা, বিস্তার, কার্যকারিতা বা ক্ষতির পরিমাপ এসব জানা যেতে পারে। তবে ‘হু’ (ডঐঙ) সব দেশকে সতর্ক থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যপারে তৎপর থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশেসহ বিভিন্ন দেশের সরকার এই সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে করণীয়-অকরণীয় সম্বন্ধে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যাই পাওয়া যায়না কেন ওমিক্রনকে হু “উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরণ” (ঠধৎরধহঃ ড়ভ ঈড়হপবৎহ) বলে ঘোষণা করেছে। করোনা বা কোভিড-১৯ এর রূপ বদল করে এটি আরো ভয়ংকর রূপে আবির্ভুত হয়েছে। করোনার এই সংস্করণ এখন সংশ্লিষ্ট সবারই মাথাব্যথা। এটির ছড়ানোর ক্ষমতা প্রবল, কোভিড-১৯ থেকে অনেক গুন বেশী। এটি অস্বাভাবিকভাবে রূপ বদল করেছে। আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্ম অ্যান্ড ইনোভেশন জানিয়েছে ৫০ বারের মত জিন বিন্যাস পরিবর্তন করে নূতন করোনা ওমিক্রন রূপ ধারণ করেছে। আর এর মধ্যে থাকা স্পাইক প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য বদলেছে ৩০ বারের বেশী। তাই ওমিক্রন অন্য যে কোন করোনা ভ্যারিয়েন্ট থেকে আলাদা ও ভয়ানক। বিভিন্ন সংস্থা একে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। কেউ কেউ বলেন, এই ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগের ও ভয়ংকর। কেননা, করোনা প্রতিরোধে গৃহিত ব্যবস্থা এবং টিকা একে আটকাতে পারছেনা। সব ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা এর রয়েছে। অন্যরা বলছেন, এতো উদি¦গ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটিকে ভালভাবে বুঝতে আরো সময়ের প্রয়োজন। অহেতুক আতংকগ্রস্ত হতে তাঁরা বারণ করছেন। তবে উদ্বিগ্ন হাওয়ার কারন আপাততঃ এইটুকু যে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গসহ জনবহুল গৌতেং এলাকায় যে সব রোগী সনাক্ত হয়েছে তার ৯০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর ২০২১ করোনার এই নূতন ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা ২৪ নভেম্বর নিশ্চিত হয় এটির ব্যপারে এবং পরের দিন বিশ্ব মিডিয়ায় তা প্রচারিত হয়।
ওমিক্রনের সংক্রমণ বিস্তার বাড়ছেই দ্রুতগতিতে। মোটামুটি সব মহাদেশেই ইতোমধ্যে এটি হানা দিয়েছে। হু-এর মতে করোনা ভ্যারিয়েন্ট আলফা, বিটা, গামা এবং বিশ্বব্যপী ভয়াল ভাইরাস ডেলটা ধরনের চেয়েও ভয়ংকর। ওমিক্রনের মধ্যে এমন কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এমনকি করোনা টিকা দেয়া ব্যক্তিকেও সংক্রমন করতে পারে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে ওমিক্রনের দেহে স্পাইক নামক প্রোটিনে ৩০ ধরনেরও বেশী বৈশিষ্ট্য (গঁঃধঃরড়হ) রয়েছে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী এন্টিবডি-এর মূল লক্ষ্য হল এই স্পাইকের বিরূদ্ধে সংগ্রাম করে করোনার বিরূদ্ধে জয়ী হওয়া। করোনার টিকা এই কাজটিই করে থাকে। কিন্তু সেই টিকাকেও পরাভূত করে ওমিক্রন সংক্রমন করতে পারে যদিও এটিই শেষ কথা নয়। এখনো অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষা বাকী, দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষকরা দেখেছেন যে ডেল্টা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের সংক্রমন ক্ষমতা তিনগুন বেশী। এজন্যই এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এমনকি পূর্বে করোনায় আক্রান্ত শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে সংক্রমণ করার ক্ষমতাও আছে ওমিক্রনের। তবে দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতি হয়ে উঠেনি। ডেল্টা ভ্যরিয়েন্টের তুলনায় এটি কম ভয়ংকর বলে এখনো ধারণা করা হয়। ডেল্টার চেয়ে এর মিউটেশন ক্ষমতা অনেক বেশী, স্পাইক প্রোটিনও এর বেশী যার ফলে সংক্রমণ করার ক্ষমতাও বেশী। মূলতঃ ওমিক্রন হল করোনার আলফা, বেটা, গামা ও ডেল্টা ধরণের সমষ্টি, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। আর এটি হল করোনার সপ্তম সংস্করন। এর ক্ষমতা বা তীব্রতা যাই হোকনা কেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব সরকার ও জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
এপর্যন্ত যা লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, করোনার কয়েকটি লক্ষণ ও উপসর্গ কোভিড-১৯ বা ডেল্টা ধরণ থেকে আলাদা। এর মধ্যে রয়েছেÑক্লান্তিবোধ, গায়ে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, ভাইরাল ফিভারের মত লক্ষণ, নাকে স্বাদ-গন্ধ না যাওয়া, মধ্যবয়সী ব্যক্তি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত যাদের বয়স ৪০এর আশে-পাশে এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে না। এছাড়া গলা ভাংগা এবং শুকনো কাশির কথাও কোন কোন চিকিৎসক বলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসক ডাঃ এঞ্জেলিক কোয়েটজির মতে ওমিক্রনের লক্ষণ মৃদু। আর একারণেই সম্ভবতঃ মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলোজির অধ্যাপক ডাঃ দেবসেনা রাধাকৃষ্ণ বলেন, ওমিক্রন আমাদের জন্য করোনার রূপধারী আর্শীবাদ হতে পারে। ডেল্টা ধরনের ভয়ংকর ও প্রাণঘাতি ধাক্কা সামলানোর পর দ্রুত ছড়ালেও মৃদু উপসর্গ ও সাধারণ ফ্লু-র মত ওমিক্রন আমাদের গা-সওয়া হয়ে যাবে। হয়তো এটিই করোনার শেষ ছোবল। ২০২২ সালে ধীরে ধীরে তা সাধারণ সর্দি কাশির অবস্থান নিবে হয়তো। আবার অনেকে এর আক্রমণ আরো ধ্বংশাত্বক হতে পারে বলেও ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। ওমিক্রন নিয়ে শেষ কথা এখনো বলার সময় হয়নি। আরো অন্ততঃ কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তবু সতর্কতা স্বরূপ বিভিন্ন দেশ আক্রান্ত দেশ সমূহের সাথে বিমান ও সীমান্ত যাতায়ত স্থগিত করেছে। বাংলাদেশেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং সরকারীভাবে ১৫-দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা ইতোমধ্যে বহাল রয়েছে এগুলোও তারই অনুরূপ। তার মধ্যে রয়েছেÑ আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং, সব ধরনের জন সমাগম নিরুৎসাহিত করণ, সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সমাবেশ, রেস্তোরায় ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক অংশগ্রহণ, মসজিদ, উপসনালয়, গণপরিবহন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টীকা কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা, পূর্বের মত আইসোলেশনে চিকিৎসা করা ইত্যাদি।
করোনার টিকা ওমিক্রণের ক্ষেত্রে কতটুকু কাজ করবে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যেহেতু ওমিক্রন অন্য যে কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধোকা দিয়ে সংক্রমন করতে পারে তাই টিকার ক্ষেত্রে কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে টিকা ওমিক্রনের বিরূদ্ধে শতভাগ প্রতিরোধ করতে না পারলেও ক্ষতির তীব্রতা কম হবে। তাদের মতে এক্ষেত্রে বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ দেয়া প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে ওমিক্রনের প্রতিষেধক ও টিকা তৈরীর উদ্যোগ জোরে সোরে নিচ্ছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী। মার্কিন সংস্থা ফাইজার ও তাদের জার্মান অংশীদার বায়োএনটেক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে যে তাদের বর্তমান টিকা ওমিক্রনের বিরূদ্ধে কার্যকর হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই তারা ১০০ দিনের মধ্যে একটি নতুন টিকা তৈরী করতে পারবে। জনসন অ্যান্ড জনসনও একই ঘোষণা দিয়েছে। মডার্না ইতোমধ্যে ওমিক্রনের বিরূদ্ধে নতুন ধরনের বুস্টার ডোজ উৎপাদনের কাজ শুরু করছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রস ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য টিকাদানে সমন্বয়হীনতা এবং বৈষম্যের কারণে করোনার নূতন ধরনের সংক্রমন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। উন্নত ও ধনী দেশগুলো করোনা টিকার মজুদ গড়ে তুলেছে অথচ নি¤œ আয়ের দেশগুলোর সবাইকে এখনো প্রথম ডোজও দেয়া যায়নি। এই অভিযোগটি করেছেন স্বয়ং হু প্রধান।
এটা ঠিক যে, বর্তমান বিশ্বের নতুন উদ্বেগ ও আতংকের কারন করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দক্ষিণ অফ্রিকার দেশগুলো, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতে এই দ্রুততা বেড়ে চলেছে। যেহেতু এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের নব সংস্করণ এবং যে কোন প্রতিষেধককে পাশ কাটিয়ে সংক্রমণ করতে পারে তাই এটির ব্যপারে উদ্বেগ রয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনিকা টিকার উদ্ভাবক অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন যে আগামীতে এর চেয়ে ভয়াবহ মহামারী আসতে পারে তা করোনার যে কোন ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন। ওমিক্রনের সনাক্তের ১৫ দিনের মধ্যে ৫০টিরও বেশী দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ এবং বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ সবাইকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিচ্ছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সবাই তৎপর। তবে একই সংগে তারা আতংকগ্রস্ত না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। আশার কথা এই যে, সংক্রমণ বেশী হলেও ওমিক্রন এখনো প্রাণঘাতি হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ওমিক্রন সংক্রমণ গবেষক এবং শীর্ষ বিজ্ঞানী বলেন, আগে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বা টিকা নিয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রে ওমিক্রন সংক্রমণ গুরুতর নয়। বিজ্ঞানী আ্যানি ভন গটবার্গ বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, পুন:সংক্রমণ কম গুরুতর হবে”। বর্তমানে কোভিড-১৯ ও ডেল্টা ধরণের বিরূদ্ধে যে সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা ওমিক্রন ঠেকাতেও কাজ করবে। হু প্রধান তেদরোস আধানোম গ্রেব্রেয়াসুস তাই আহবান জানিয়েছেন যেন করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বব্যপী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করা হয়।
নি:সন্দেহে ওমিক্রন সংক্রমণ একটি নূতন আপদ এবং উদ্বেগের কারণ। বিশেষ করে এর সংক্রমণ ক্ষমতা ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়া গত দু’বছরে বিধ্বস্ত পৃথিবীকে আতংকগ্রস্ত করে তুলেছে। তাই নূতন যে কোন সংক্রমণ তা সাধারণ হোক আর ভয়ংকর হোক, মানুষের ভয় কাটছেনা। এমনিতে করোনার আঘাতে পৃথিবী অনেক পিছিয়ে পড়েছে। লকডাউনের কারনে পৃথিবী ব্যপী অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই অচল হয়ে পড়েছিল। এর প্রভাবে মানসিক ও দৈহিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে, বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এরপর আবার যদি নূতনভাবে আপদ আসে তবে মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবে। অন্যদিকে রয়েছে বিরূপ জলবায়ুর আক্রমণ। কিন্তু তবু মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসছে না। নীতিবর্হিভূত ও ধর্ম বিরোধী কর্মকান্ড যেন এসব আপদের সংগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিপদগ্রস্ত ও নি:স্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের জন্য কেউ নেই, তাই হয়তো বিধাতা মানুষকে পরীক্ষা করছেন এবং শাস্তি স্বরূপ আপদ নাজিল করছে, ধার্মিকেরা তাই বলেন মানুষের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক, শান্তি ফিরে আসুক, এটিই সময়ের চাওয়া। ওমিক্রনের বিরূদ্ধে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যপী প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। করোনার টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং বুস্টার ডোজ দেয়ার ব্যপারেও তাগিদ এসেছে। করোনার ধকল সামলাতে গিয়ে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এবং ওমিক্রন প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেজন্য অনেকটা সহজ হবে বলে আশা। কেননা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ বহাল রয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি সম্বন্ধে সচেতনতা এবং তা মেনে চলার উপরই নির্ভর করবে ওমিক্রনের আক্রমণের মাত্রা এবং পরাস্ত হওয়া।
অধ্যক্ষ ও কলাম লেখক