খুলনার পাইকগাছায় চিংড়িঘের ও জমিরমালিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। চিংড়িঘেরমালিকরা লবণপানিতে চিংড়িচাষের পক্ষে। অপর দিকে মিষ্টিপানিতে একই সঙ্গে ধান ও চিংড়ি চাষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জমিরমালিকরা। এ নিয়ে চিংড়ি চাষি সমিতি তাঁদের সদস্যদের নিয়ে ১১ ডিসেম্বর সভা-সমাবেশ করেছে। আর মিষ্টিপানিতে ধান চাষ ও চিংড়ি চাষের পক্ষে জমির মালিকরা একত্র হয়ে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। চিংড়ি চাষি সমিতির নেতারা ৭ ডিসেম্বর উপজেলা মিলনায়তনে সাংসদের সঙ্গে উপজেলা মিলনায়তনে এক মতবিনিময়সভা করে চিংড়ি চাষের সুফল তুলে ধরে বলেন, সরকার চিংড়ি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচ্ছে। সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট অংশ চিংড়ি থেকে আসছে। এ খাতের সঙ্গে জড়িত কাঁকড়া, মৎস্য কাটার হাজারো ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়বে। তা ছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা মিষ্টিপানিতে ধান ও চিংড়ি চাষের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেন, সারা বছর লবণপানি জমিতে ধরে রেখে চিংড়ি চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এলাকার গাছপালা মরে যাচ্ছে, গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মিষ্টিপানির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। তাঁরা আরও জানান, লবণপানির চিংড়ি চাষের ফলে পানির ঢেউয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে নষ্ট হচ্ছে। শত শত ঘেরমালিক ওয়াপদার রাস্তা কেটে নষ্ট করছেন। যেখানে রাস্তা কেটে পাইপ ঢোকানো হচ্ছে, সেখানে নিচু হয়ে নদীর জোয়ারের জল প্রবেশ করে ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষতি হচ্ছে। তাঁরা আরও জানা, উপজেলার গড়ইখালী ও দেলুটির দুটি পোল্ডারে লবণপানি না ঢোকানোয় তরমুজ, তিল ও সবজি চাষে কৃষকরা বিঘাপ্রতি জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করতে পেরেছেন। একদিকে জমির উর্বরতা ও মাটির গুণাগুণ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকেরা ও জমির মালিক ফসল ফলিয়ে কৃষিসমৃদ্ধ দেশ গড়ার পাশাপাশি তাঁরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এদিকে লবণপানিতে চিংড়িঘের ও মিষ্টিপানিতে ধান এবং মৎস্য চাষ হবে কি হবে না, এ বিষয়ে একটি কমিটি হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম। অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, ১০ ইউপি চেয়ারম্যান, চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১০ সদস্য। এ বিষয় পাইকগাছা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, আধুনিক পদ্ধতি ও পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করলে লবণপানি জমিতে তোলা লাগবে না।পাইকগাছা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলার সোলাদানা, গদাইপুর, দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নে আশির দশক থেকে লবণপানিতে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। এ এলাকায় চিংড়িঘেরের মাটি দীর্ঘদিন লবণপানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মাটির অনুজ। জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিগগির কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বসে সমাধান করা হবে।