করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো পৃথিবী যেমন বিপর্যস্ত হয়েছে, তেমনি দেশেও নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মোকাবিলায় যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সতর্ক থাকা জরুরি, তেমনি টিকার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় করোনার বুস্টার ডোজ টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেশে। তথ্য মতে, দেশে প্রথম বুস্টার ডোজ নিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তাকে দিয়েই। রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএসএ) রোববার দুপুর ১২টার দিকে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আমরা বলতে চাই, বুস্টার ডোজের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সামগ্রিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন আতঙ্ক 'ওমিক্রনের' নাম আলোচনায় এসেছে। হঠাৎই নতুন ভ্যারিয়েন্ট 'ওমিক্রন' বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দেশেও ওমিক্রন শনাক্তের খবর জানা গেছে, আর এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, বুস্টার ডোজ করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর তা পর্যালোচনা করে দেখা যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক বলেছেন, টিকার এই অতিরিক্ত ডোজ গুরুতর অসুস্থতা থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। যদিও এই হার করোনাভাইরাসের আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর ক্ষেত্রে প্রচলিত টিকাগুলো যে সুরক্ষা দেয়, তার চেয়ে খানিকটা কম। তা সত্ত্বেও বুস্টার ডোজের সুরক্ষা অসংখ্য মানুষকে হাসপাতালের বাইরে রাখতে পারবে। ফলে বুস্টার ডোজের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, যখন দেশে বুস্টার ডোজের কার্যক্রম শুরু হলো, তখন এর সার্বিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, বুস্টার ডোজ নিতে আসাদের প্রত্যেককেই ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া, আগে যে কোনো ডোজ নেওয়া ব্যক্তিরাই বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার নিতে পারবেন। প্রথম দিন পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন শ্রেণির ষাটোর্ধ্ব বয়সি দু-তিনজন করে ফাইজারের টিকা দিয়ে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। পরে টিকা নিবন্ধনের জন্য তৈরি সুরক্ষা অ্যাপে বুস্টার ডোজের উপযোগীদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে সারাদেশে একযোগে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হবে বলেও জানা যাচ্ছে। মূলত যাদের টিকা নেওয়ার সময় ছয় মাস অথবা এক বছর হয়ে গেছে, প্রথমে তারাই করোনা টিকার বুস্টার ডোজ পাবেন। প্রাথমিকভাবে দেশে ফাইজারের টিকা বুস্টার ডোজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পর্যায়ক্রমে বুস্টার ডোজ টিকা সারাদেশে দেওয়া হবে। আর বর্তমানে সাত লাখ ফাইজারের টিকা মজুত রয়েছে। আগামী মাসে আরও দুই কোটি টিকা আসবে বলেও জানা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এর আগে এমন আলোচনা এসেছে, সংক্রমণের হার বাংলাদেশে কমলেও তাতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই; কেননা, বিশ্বে ওমিক্রন আতঙ্ক এবং দেশেও শনাক্ত হয়েছে। ফলে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা, পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সঠিক উপায়ে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা, একই সঙ্গে টিকা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে সহায়তা করাসহ যে বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে, তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং জনসচেতনতার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া যেহেতু ওমিক্রনের বিরুদ্ধে বুস্টার ডোজ ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম, আর দেশেও বুস্টার ডোজ শুরু হলো- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অকারণে ঘোরাফেরা না করা, মাস্ক পরাসহ প্রয়োজনীয় সচেতনতাও জরুরি। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।