ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সহজ-সরল মানুষকে বুঝিয়ে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কয়েক শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উদাও হয়েছে ‘গ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের একটি এনজিও। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ঋণগ্রহীতা গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিসে তালা ঝুলানো। এ সময় হতাশায় ক্ষুব্ধ গ্রাহরা থানার সামনে অবস্থান নেয়।পরে ভ’য়া এনজিওর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়া ঋণ গ্রহীতারা থানায় অভিযোগ জানান।
ভ’ক্তভোগীরা জানায়, প্রায় এক মাস আগে ‘ গ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্র’ (গাউক) নামের একটি ভ’য়া এনজিও সংস্থার কয়েকজন মাঠ কর্মী ঋণ দেওয়ার নামে পৌরশহরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে প্রচারণা করে। তারা আগ্রহী গ্রাহকদেও কাছ থেকে অগ্রিম সঞ্চয় বাবদ ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা নেয়। সোমবার পৌরশহরের মসজিদ পাড়ার একটি তিনতলা ভবনে অফিস উদ্বোধন করে ঋণ দেওয়ার দিন ধার্য করেন। সকালে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা ঋণগ্রহীতারা অফিসে এসে দেখেন তলাবদ্ধ এবং পালিয়ে গেছে ওই এনজিওর কর্মীরা। উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক শরীফ মিয়ার স্ত্রী শরীফা বেগম জানান, এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি স্বামীকে কর্মসংস্থান করে দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সঞ্চয় বাবাদ তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়। সোমবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিস ঘরটি তালাবন্ধ। কর্মীদের মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের বীরচন্দ্র পুর গ্রামের কৃষক সাদেক মিয়া জানান, তারা দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে গত দুই দিন আগে আমার কাছ থেকে একটি বইয়ের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা নেয়। সকালে ঋণ নিতে এসে দেখি সবাই অফিসে তালা দিয়ে চলে গেছে। একইভাবে প্রতারিত নাদিরা বেগম ও তার পঙ্গু স্বামী কিরণ মিয়া জানায়, ঋণ দেওয়ার কথা বলে আমাদের আটজনের কাছ থেকে একটি বইয়ের মাধ্যমে আশি হাজার টাকা নেয়। আমরা সবাই সকালে অফিসে এসে দেখি ঋণ দেওয়া তো দুরের কথা ওই টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা পালিয়েছে। তোরা বেগম নামের এক নারী জানান, স্বামীর ব্যবসার জন্য এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে গরু বিক্রি করে তাদের হাতে ৩০ হাজার টাকা এনে তুলে দেই। সকালে অফিসে এসে শুনি তারা সবাই পালিয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর পৌরশহরের মসজিদ পাড়ায় একটি তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে ‘ গ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্র’ গ্রাউক নামের একটি ভ’য়া এনজিও প্রতিষ্ঠান প্রতারণা ব্যবসা শুরু করে। ভবনের মালিক দুবাই প্রবাসী আলেক মিয়া। তার স্ত্রী সেতু আক্তার জানায়, চলতি মাসের ৪ তারিখ ভবনের তিন তলার একটি কক্ষ মাসিক ৬ হাজার টাকায় তারা ভাড়া নেয়। নতুন বছরের ১জানুয়ারি অফিসটি উদ্বোধন করে আমাদের ভাড়া পরিশোধ করার কথা।আমরা বুঝতে পারিনি তারা এত বড় প্রতারক। তিনি আরো জানান, এই এনজিও অফিসে ম্যানেজার হিসাবে মুক্তার হোসেন, মাঠ কর্মী হিসাবে মান্নান, ইমন ও অফিস সহকারি হিসাবে লাবনী আক্তার নামে স্থানীয় এক নারী চাকুরী করতেন। গতকাল রাত থেকেই মুক্তার হোসেন, মান্নান, ইমন উদাও হয়ে গেছে। ওই এনজিওর অফিস সহকারি লাভনী আক্তারের বাড়ি পৌরশহরের দূর্গাপুর এলাকায়। তিনি বলেন এই অফিসের ম্যানেজার মুক্তার হোসেন মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে আমাকে এখানে চাকুরী দেয়। আমার চাকুরীর বয়স মাত্র ১৪ দিন। প্রতিদিনের মতো সকালে এসে দেখি অফিসে তালা ঝুলানো। বাইরে শতাধিক ঋণগ্রহীতা দাঁড়িয়ে আছে। গুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি তারা এত বড় প্রতারক।
আখাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, এ ধরনের এনজিও প্রতিষ্ঠানের নাম সরকারি তালিকায় নাই। অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষের সচেতন হওয়া উচিৎ।