শিক্ষার্থিদের শিক্ষা জীবনে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শিক্ষার্থীদের ভিত রচিত হয়। এ স্তরটি যতো মজবুত হবে, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার স্তরটি ততো শক্ত হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রশাসনের অনেক পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে সহকারী শিক্ষক থেকে উপ-পরিচালক পর্যন্ত প্রায় ২২ শতাংশ পদেই শুন্য। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের পদেই ২০ শতাংশ শুন্য। ফলে অনেক শিক্ষার্থী দক্ষতা ও মানের ঘাটতি নিয়েই বেড়ে উঠছে।
বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক সংকটের কারণে যখন শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তখন সেই সব শূন্যপদ পূরণের জন্য যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। গত তিন বছরেও দু’হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি সরকার। মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট দূর করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে দু’লাখের অধিক প্রার্থী আবেদন করেছিল। পরীক্ষা শেষে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দু’হাজার ১৫৫ জন প্রার্থীকে সহকারি শিক্ষক শিক্ষিকা পদে সুপারিশ করে সরকারি কর্ম-কমিশন(পিএসসি)। কিন্তু সে নিয়োগ এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট না পাওয়ার কথা।
শুধু শহর বা নগরীর বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা সংকট না, গ্রামের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোর চিত্রও একই। শিক্ষা প্রশাসনের অনেক সহকারী পরিচালক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করতে করতে অবসরে যাবার সময় হয়ে গেছে। তাদের মাঝে হতাশা বাড়ছে। কর্মদক্ষতা হারাচ্ছে। এ ছাড়া এখন অনেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা দেয়া হয়। সঙ্গত কারণে দক্ষ মেধাবী শিক্ষক শিক্ষিকা আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শ্রেণী কক্ষ বাড়লেও শিক্ষকের পদ বাড়েনি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যতজন শিক্ষকের পদ রয়েছে,বাস্তবে তার সিংহভাগই শুন্য। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে।
শুধু শিক্ষক সংকট নয়,বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পিয়ন,দারোয়ান,সুইপার সহ অন্যান্য জনশক্তির সংকটও শিক্ষার্থীদের পাঠে অসুবিধা সৃষ্টি করছে। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাধ্যমিক) ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন,”শুধু পিয়ন বদলি হয়েছে,তাই জুতা সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ। প্রধান শিক্ষক কাম-দপ্তরি-কাম পিয়ন-কাম দারোয়ান-কাম সুইপার-কাম ঝাড়ুদার-মালি”। তার বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর পদ রয়েছে ১০ টি। এর মধ্যে ৫টি পিয়ন পদে কেউ নেই। অন্যান পদের মধ্যে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছেন,তিনিও অসুস্থ। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান চালানো কতটা কষ্টকর তা ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝা কঠিন।
সরকারি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন করুন চিত্র যখন পর্যবেক্ষন মহলকে ভাবাচ্ছে, তখন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কি তা ভাবনায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর সেই মেরুদন্ড শক্ত করার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ কারো নেই। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি কর্ম-কমিশনের সুপারিশকৃত প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয় গুলোর শূন্যপদ পূরণ জরুরি। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শুন্য অন্যান পদ পূরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।