মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। এ জন্যই সমাজে শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, শিক্ষার্থীরাও যুগে যুগে স্মরণ রাখেন। শিক্ষা জাতির মেরুদ-, শিক্ষিত জাঁতি অনুন্নত বা পশ্চাৎপদ থাকার কোনো নজির পৃথিবীতে নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা বিনির্মাণ। তাই শিক্ষিত জাঁতি গঠনের মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে শিক্ষককে তিনি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন শিক্ষা বন্ধব সরকার তিনি শিক্ষা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। এরপর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি অতীতে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। জাতীয় নেত্রী হিসেবে এ দীর্ঘ সময়কালে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন, প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যে বিরল ও অভূতপূর্ব কৃতিত্ব তিনি দেখিয়েছেন, দেশে তার কোনো দ্বিতীয় নজির নেই। বহির্বিশ্বের অনেক দেশেও এমন নেতৃগুণসম্পন্ন, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতা দেখতে পাওয়া যায় না। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার পাশাপাশি বিশ্বনেতা হিসেবেও তাঁর অনিবার্য স্বীকৃতি মিলেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য, সন্দেহ নেই, অত্যন্ত গৌরবজনক ও মর্যাদাকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা। কথায় বলে: বৃক্ষের পরিচয় ফলে। এক্ষেত্রেও সেটা বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য। শেখ হাসিনাকে দেখে বুঝতে মোটেই অসুবিধা হয় না যে, তিনি বঙ্গবন্ধুরই কন্যা। ব্যক্তিত্ব, আচার-আচরণ, সভ্যতা-ভব্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা, আদর্শনিষ্ঠা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ করার দৃঢ় প্রত্যয় ইত্যাদি দিক দিয়ে তাঁর সঙ্গে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই তুলনা করা যায়। বাংলাদেশ মানেই যেমন বঙ্গবন্ধু, তেমনি শেখ হাসিনাও তাঁর পিতার মতো প্রতীক ও পরিচয়ের পতাকা হিসেবে নিজেকে বিভূষিত করেছেন। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে, তাঁর পরিচিতির সঙ্গে শেখ হাসিনাও এক অপরিহার্য নাম। শেখ হাসিনা নানা উপলক্ষে প্রায়ই বলে থাকেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য। জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণ ছাড়া তাঁর আর কোনো অভিপ্রায় নেই। উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা তার সমস্ত কর্মের অনুপ্রেরণা। দেশ ও জাতীয় উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ছাড়া কোনো জাতীয় নেতার আর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। এজন্য জীবন দিতেও তিনি সদাপ্রস্তুত থাকেন। তিনি শিক্ষাক্ষেত্র এক অন্যান্য নজীর সৃষ্টি করার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের দিয়ে ইউনিক আইডি করার কার্যক্রম শুরু করেছেন। দেশে রাজধানী থেকে গ্রাম গজ্ঞে কাজটি সফল করার একযোগে কাজ করছেন। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয়তা সনদের মতো প্রত্েযক শিক্ষার্থীকে একটি ডিজিটাল কার্ড (প্লাস্টিকের এটি এম/ স্মার্ট কার্ডের মতো) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আইডিতে ডিজিটাল ভাবে শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। এই আইডির নাম ইউনিক আইডি। সেখানে প্রত্েযক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা একটা রোল নম্বর থাকবে। এই রোল নম্বরটি সারাজীবন প্রত্েযক ক্লাসে ব্যবহার করতে হবে এবং একই থাকবে। এজন্য আইসিটি শিক্ষক, শিক্ষা প্রধানদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এখন থেকে ক্লাসে কোন রোল এক, দুই, তিন থাকবে না। এটা হবে বিশাল বড় একটা রোল নম্বর যেটা মোবাইল নম্বরের মতো। এই মহৎ ও কঠিন কাজ করার জন্য চার পৃষ্ঠার একটা ফরম পূরণ করে শীঘ্রই স্কুল/ কলেজে জমা দিতে হবে ( স্কুল/কলেজ থেকে বলা হয়েছে) ইউনিক আইডি প্রদান সংক্রান্ত শিক্ষার্থী প্রােফাইল ও ডাটাবেজ প্রণয়নের লক্ষে শিক্ষার্থীর তথ্যফরম পূরণে যে সকল ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে তার তালিকা (৬ষ্ঠ থেকে শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত) ১। শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি ২ কপি। ( ছবির বেকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে) ২। শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ০১টি। ৩। শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ সনাক্তের মেডিকেল রিপোর্টের ফটোকপি ১টি। ৪। মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (ঘওউ) ফটোকপি ০১টি। (পরিচয়পত্রের অপর পৃষ্ঠায় মাতার মোবাইল নম্বরটি লিখে দিতে হবে)। ৫। মাতার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ০১টি। ৬। পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (ঘওউ) ফটোকপি ০১টি। (পরিচয়পত্রের অপর পৃষ্ঠায় পিতার মোবাইল নম্বরটি লিখে দিতে হবে)। ৭। পিতার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি ০১টি ৮। পিতা-মাতা উভয়ই জীবিত না থাকলে অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (ঘওউ) ফটোকপি ০১টি। ৯। শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশনের ফটোকপি ০১টি (৮ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। ১০। প্রাথমিক/ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার সনদের ফটোকপি ০১টি (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরতদের জন্য প্রযোজ্য)। ১১। পিইসি/ইবতেদায়ী, জেএসসি/জেডিসি,এসএসসি/দাখিল/ ভোকেশনাল পরীক্ষার নম্বরফর্দ (ট্রান্সক্রিপ্ট) এর ফটোকপি ০১টি।
১২। শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী হলে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের ফটোকপি ০১টি। (সকল তথ্য অবশ্যই সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে) এখানে সমস্যা হতে পারে শুধু জন্মনিবন্ধন নিয়ে। কারণ, যাদের বাসায় হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ আছে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। ডিজিটাল লাগবে। তার মানে, জন্মনিবন্ধন অবশ্যই অনলাইন করা থাকতে হবে। যাদের জন্মনিবন্ধন অনলাইন করা নাই। তারা শীঘ্রই করে নিতে হবে। প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি করা হচ্ছে স্কুলগুলোয়। এটি করতে গিয়ে অনেক অভিভাবকই ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে জানা গেছে। মূল সমস্যাটি দেখা দিচ্ছে শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নিয়ে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ছে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য ‘ইউনিক আইডি’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইউনিক আইডি ফরম পূরণে পড়ছেন নানা জটিলতায়। বিশেষ করে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্ন: কী হবে এই ‘ইউনিক আইডি’ দিয়ে?
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় রাখার জন্য ইউনিক আইডি তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান এ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক নাগরিককে একটি আইডি দিয়ে চিহ্নিত করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিশ্বের ১১টি দেশের সঙ্গে সরকার এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)। তিনি আরও জানান, এর আওতায় দেশের বেসিক স্ট্যাটিসটিকস তৈরি হবে। অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় বর্তমানে কোনো শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করছে। আর যারা ১৮ বছরের ওপরে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে। এই দুই স্তরে আইডেন্টিফিকেশন নম্বর আছে। কিন্তু মাঝখানে বাদ পড়ে যাচ্ছে প্রি-প্রাইমারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এদের আইডেন্টিফিকেশনের আওতায় আনার জন্যই ইউনিক আইডি তৈরি করা হচ্ছে। ১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সব ধরনের সেবা ইউনিক আইডির মাধ্যমে পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থীর সব ধরনের সেবা, যেমন বই নেয়া থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, রেজিস্ট্রেশন, বৃত্তি, উপবৃত্তির অর্থ নেয়া অর্থাৎ যত ধরনের নাগরিক সেবা আছে সবই দেয়া হবে এই আইডির মাধ্যমে। আর যখন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে এই ইউনিক আইডিই জাতীয় পরিচয়পত্রে রূপান্তর করবে। এই ইউনিক আইডির মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাব, তারা কোথায় লেখাপড়া করছে, ঝরে পড়ল কি না, অথবা তারা কোন লেভেলে পড়াশোনা করছে, চাকরি পেল কি না ইত্যাদি।’ ইউনিক আইডি চালু হলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের অপচয়ও বন্ধ হবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় অনেক সময় আমরা চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ বই ছাপাচ্ছি। এতে অনেক টাকা অপচয় হচ্ছে। যখন ইউনিক আইডি তৈরি হয়ে যাবে, তখন কোনো ডুপ্লিকেট শিক্ষার্থী থাকবে না। কারণ তখন শিক্ষার্থীর সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের হাতে থাকবে। পরিচালক শামসুল আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থী এবং বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে আমরা বেশির ভাগ তথ্য নেব। সেখানে যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। সংশোধন করতে হলে আগে জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক করতে হবে। ‘জন্ম নিবন্ধনে শিক্ষার্থীর নাম, বাবা-মার নাম মিল থাকার বিষয়টি সবাইকে খেয়াল করার অনুরোধ করছি। এই নির্দেশনা মানলে আর কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।’ ইউনিক আইডির ফরমে যেসব তথ্য শিক্ষার্থীরা দিচ্ছেন, তা যেন কোনোভাবে অন্যের হাতে না যায় তা নিশ্চিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক শামসুল আলম। বলেন, ‘শিক্ষার্থীর তথ্য সুরক্ষায় আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে, যেন তথ্য বেহাত না হয়। এর বেশি বলা সম্ভব নয়।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিক আইডির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে এখন জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তাই আমরা ধরে নিতেই পারি, সব শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন আছে। যারা স্কুলে ভর্তিই হয়নি, তাদের জন্ম নিবন্ধন নাও থাকতে পারে সমস্যা হলো জন্ম নিবন্ধনের কোনোটা ম্যানুয়াল, কোনোটা ডিজিটাল। যেসব শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন ম্যানুয়াল, তাদের ডিজিটাল অর্থাৎ অনলাইনে এন্ট্রি দেয়া জন্ম নিবন্ধন লাগবে। কারণ ইউনিক আইডি দেয়ার অন্যতম শর্ত হলো শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের সঙ্গে মিল থাকতে হবে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধনের। ‘যদি কোনো শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে সে ইউনিক আইডি পাবে না। কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের তথ্যগুলো পাঠাব অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে। তারপর সেখান থেকে যাবে নির্বাচন কমিশনে। এরপর তারা ইউনিক আইডি তৈরি করবে। এটাই সিস্টেম। এজন্য কোনো শিক্ষার্থীর যদি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন না থাকে তাহলে সে ইউনিক আইডি পাবে না।’ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে কিছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের নানা ভোগান্তিতে পড়ার কথা স্বীকার করেন শামসুল আলম। বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আসলে আমাদের কিছুই করার নেই। জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে এন্ট্রি দেয়ার জন্য অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় অনেক আগেই অফিস আদেশ জারি করেছে।’ ‘বর্তমানে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন আগে করে নিতে হবে। এটা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন-২০১৯ অনুযায়ী করা হচ্ছে। সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। যদি কেউ তা না করে তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ যেসব শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন নেই, যেসব শিক্ষার্থীর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ইতোমধ্যে করা আছে, তাদের বাবা-মায়ের শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই শিক্ষার্থী ইউনিক আইডি পাবে। আর যেসব শিক্ষার্থীর অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন এখনও করা হয়নি, তাদের জন্ম নিবন্ধন করতেও বাবা-মায়ের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন লাগবে। এটা আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।’ আগামী বছরের শুরুতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হবে ইউনিক আইডি। জানতে চাইলে মাধ্যমিক পর্যায়ের ইউনিক আইডির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. শামসুল আলম বলেন, ‘আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হবে ইউনিক আইডির ফরম পূরণের কার্যক্রম। এরপর ডাটা এন্ট্রি দেয়া হবে। আশা করছি, আগামী বছরের শুরুতেই পর্যায়ক্রমে ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে ইউনিক আইডি তুলে দেয়া সম্ভব হবে। তবে এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ডিসেম্বরে আমরা কিছু উপজেলায় ইউনিক আইডি বিতরণের পরিকল্পনা করছি।’ এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডির ডাটা এন্ট্রির সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে, আগামী মাস থেকে ডাটা এন্ট্রি দেয়া শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তৈরি হবে ২ কোটির বেশি ইউনিক আইডি। অন্যদিকে প্রাথমিকের ইউনিক আইডির প্রকল্প পরিচালক মো. মঞ্জুরুল আলম প্রধান বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরির জন্য বিদ্যালয় পর্যায়ে এ মাস থেকে সফটওয়্যারে ডাটা এন্ট্রি শুরু হবে। এজন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষপর্যায়ে। এরপর পাইলটিং হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি করা হবে। এরপর সেটি সফল হলে পুরোদমে শুরু হচ্ছে। কাজটি সফলভাবে শেষ হওয়ার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক যখন ’ সুফল পেতে শুরু করবে তখন দেশ, জাতি, সমাজ উপকৃত হবে।