বড়াল ও চিকনাই নদ-নদীর মতোই পাবনার চাটমোহর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত একদার স্রোতশিনী গুমানী নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকনো মৌসুম না আসতেই নদীটির বুকে এখন বোরোর বীজতলা। অথচ মাস দুই আগেও নদীটির বুক দিয়ে হাজারমনী মহাজনী নৌকা,যাত্রীবাহী বড়বড় ইঞ্জিন নৌকা চলাচল করেছে। চাটমোহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিদ বড়াল ও চিকনাই নদীর পাশাপাশি গুমানীও মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। প্রভাব পড়েছে কৃষি কাজে আর ব্যবসা বানিজ্যে। নদীগুলো খনন না করার কারনেই এমন হাল হয়েছে বলে অভিমত বড়াল ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিক এস এম মিজানুর রহমানের।
চাটমোহরের মির্জাপুর হাটের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, এ নদীপথই আমাগারে সার-ডিজেল আনতে হয়। খরচ কম হয়। এখন শুকনো মৌসুমের আগেই নদী শুকায়ে যায়। আমাগারে বেশী খরচে সড়ক পথে মালামাল আনতে হয়। তিনি আরও বলেন,মির্জাপুরে অনেক ধানের চাতাল। বড় বড় শহরে এ নদী পথেই চাল পাঠাই নৌকায়। কয়েক বছর থেকে নদী বর্ষার শেষ দিকে শুকিয়ে যায়।
অষ্টমনিষা হাটের পাশের বাসিন্দা কৃষক রহমত আলী বলেন,এই নদীতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিয়ে আমারা বোরোধানে সেচ দেই। সেই নদী এখন আবাদ শুরুর আগেই শুকায়ে যায়। মির্জাপুর-অষ্টমনিষা গুমানী নদীর ঘাটের ইজারাদার নাদের আলী বলেন, আমার জীবনে আমি এই নদী পানিশূন্য দেখি নাই। কিন্তু কয়েক বছর থ্যাকে চৈতমাসের পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমারা শুকনের উপর বসে ঘাট পাড়ানি তুলি।
গুরুদাসপুরের সিঁধুলাই সমাজ কল্যাণ সমিতি (এসএসএস) পরিচালিত নৌকা স্কুলের মির্জাপুর শাখার ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা বলেন, গুমানীর পাড়েই আমাদের কার্যক্রম। আর আমাদের নৌকা গুলো একটু অন্যরকম, বড়। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আমাদের নৌকা স্কুল নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে।
মির্জাপুর হাটের পশ্চিম পাশে গুরুদাসপুর থেকে বয়ে এসে করতোয়া নদী মিশেছে গুমানীতে। সেই মোহনার ঘাটের পাড়ানি নাথুরাম তরনী দাস(৭০) স্মৃতি হাতরে বলেন, কি বলবো বাবু, এই গুমানী নদীর এক সুময় এত স্রোত ছিলো এক ঘাটের মানুষ লিয়ে অন্যঘাটে নৈকে লিতে যান বাড়াই যাইত। আমি ছোটবেলা শুনিচি। গুমানী ছিলো মানুষ কাউয়া নদী, কেউ এই নদীত পড়লি আর খুঁজিয়া মিলান যাইতক না। কি যে হইলক সেই নদীত এখন পানিই নাই। মরা এই নদীর একদা ছিলো ভরা অতীত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার বলেন,নদী নাব্যতা হারিয়েছে স্রোতহীনতায়। নদীপাড়ের মাঠে অপরিকল্পিত গভীর নলকুপ বসিয়ে আবাদ করা হচ্ছে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে টান পড়ে, দ্রুত ভূ-উপরিস্থ পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।