সময়ের পরির্তনের সাথে সাথে গ্রামীণ ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে বিজ্ঞানের ছোয়ায়। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সারাদেশের মত পাবনার বেড়া উপজেলা থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে একসময়কার অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ ঢেঁকি। এখন আর কোন বিশেষ উৎসব বা ধান ভানার জন্য শোনা যায় না সেই শব্দ। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে ঢেঁকি অনেক হারানো জিনিসের পাতায় স্থান পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বেড়া উপজেলার গুটিকতক বাড়িতেই আজো টিকে আছে এই ঢেঁকি। অথচ একসময় ছিল যখন ঢেঁকি গ্রামের মানুষের প্রতিটি বাড়িতে ছিল। গাব গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করা ঢেঁকি ছিল টেকসই। শীতকাল এলেই বাড়িতে বাড়িতে ঢেঁকি পার দেয়ার শব্দ কানে ভেসে আসতো। বাড়ির বধূদের দিন কেটে যেত নতুন ধানের চাল গুড়া করায়। পরিবারের নারীরা সেসময় দৈনন্দিন ধান,গম ও যব ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। পাশাপাশি চিড়া তৈরির মত কাজও ঢেঁকিতেই করতো। বিশেষ করে বাংলার বিশেষ উৎসব যেমন ঈদ, পূজা, নববর্ষ বা পৌষের পিঠা পার্বণ সব অনুষ্ঠানেই বাড়িতে বাড়িতে দেখা যেত ঢেঁকির ব্যাবহার। সেসময় গ্রামের বধুদের ধান ভাঙার গান আর শব্দ ছন্দের মত সারা গ্রামে ছড়িয়ে পরতো। সেই শব্দ আজ আর ভেসে আসে না। তার বদলে কলের কান ফাটানো আওয়াজ শোনা যায়। অল্প সময়েই অনেক চাল গুড়া করা যায় এসব কলকারখানায়। সেসময় নিজ বাড়ির ধান ভানার কাজ করার পাশাপাশি ধনীদের ধান ভানার কাজ করে বাড়তি আয় রোজগারও করতো। ঢেঁকিতে ভাঙা চাল ছিল সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। কিন্তু ধান গম ভাঙা যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ায় ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্ত। ক্রমেই গ্রাম বাংলা থেকে ঢেঁকি হারিয়ে যাচ্ছে। বেড়ার নাকালিয়া গ্রামের গৃহিনী মনজুরা আক্তার, আমি নতুন বউ হয়ে আসার পর আমার শাশুড়ির সঙ্গে ঢেঁকি চালের গুড়ি আর চিড়া করতাম। সেই ঢেঁকি আর নেই। এখন বাজারে নিয়ে মেশিনে চাল ভাঙতে হয়।