বাড়ি হচ্ছে নিরাপদ আবাস। কিন্তু সেই বাড়ি যদি হয় ঝুকিপূর্ণ তাহলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হয় বৈকি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর। তবে এসব বাড়িঘর যে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনার আগে জানার উপায় নেই। যাদের এসব দেখভাল করার কথা, তাঁদের চোখের সামনেই একের পর এক অবৈধ ও নকশাবহির্ভূত স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বহুতল ভবনও আছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই এটি হতে পেরেছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরের মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড রোড এলাকায় দুটি ভবন ও একটি মন্দির হেলে পড়ার প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে খালি করে দিয়েছে। হেলে পড়া ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি তিনতলা, একটি দোতলা এবং একতলার একটি মন্দির। এ ছাড়া দেবে গেছে একটি টিনের ঘর। ভবন দুটি ও টিনের ঘরে অন্তত ১০টি পরিবার থাকত। ভবনমালিকেরা বলেছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কাছ থেকে নকশা অনুমোদন করিয়েই তাঁরা সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন; কিন্তু চউকের জলাবদ্ধতা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করার সময় ভবনগুলো হেলে পড়ে। অন্যদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বলেছেন, ভবন দুটি চউকের নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি। ভবন দুটির কিছু অংশ খালের মধ্যে ছিল।
এখন প্রশ্ন হলো খালের মধ্যে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মিত হলো কীভাবে? চউক যখন দেখেছে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, তারা সেটি ভেঙে ফেলল না কেন? কেবল চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশে হাজার হাজার অননুমোদিত ভবন আছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ৩২১টি ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছিল, এগুলো ভেঙে ফেলা হবে। এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনসহ দুটি ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন ও ফায়ার সার্ভিস বিল্ডিং। ঢাকার বাইরে বন্দরনগর চট্টগ্রামে ২৪টি, খুলনায় ৪০টি ও সিলেটে ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এর মধ্যে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও আছে।
ঢাকায় রাজউকের আওতাভুক্ত এলাকায় বর্তমানে ভবনের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। এর আগে অপর জরিপে ঢাকায় ৭২ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কেবল নকশাবহির্ভূত স্থাপনা নয়, নকশা অনুমোদিত অনেক ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। অনেক বহুতল ভবনেও নিজস্ব অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা নেই।
ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্য যেখানেই হোক যে মালিকেরা নকশাবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবে এটাই প্রত্যাশা।