সময়ের ব্যবধানে নারীর প্রতি সহিংসতা যেন কমছেই না। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা আরো উদ্বেগজনক। সেই সাথে বাল্যবিবাহও বেড়েছে আশংকাজনক ভাবে। বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে গত বছরের তুলনায় পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে ১০ শতাংশ। পারিবারিক নির্যাতনে হত্যা, আত্মহত্যাসহ মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে ৭ শতাংশ। যৌতুকের কারণে নারী-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছেন ৪০ জন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বলছে, ঢাকায় গত বছরের তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের মামলা ১৩ শতাংশ এবং যৌতুকের কারণে হত্যা মামলা ২০০ শতাংশ বেড়েছে। ধর্ষণের মামলা গত বছরের তুলনায় এ ১১ মাসে ২টি কম। ডিসেম্বর মাসের হিসাব যুক্ত করলে ধর্ষণের মামলাও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০০০ সালে মহামারি করোনা কালে পারিবারিক নির্যাতন ও মৃত্যু দু’টোই বেড়েছে যথাক্রমে ৫৫৪ ও ৪৫৭ তে। এ বছর পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬০৮ টি। এর মধ্যে ৪৮৭ টি মৃত্যুর ঘটনায় ৩৫৫ টি হত্যা এবং ১৩২ টি আত্মহত্যা ঘটেছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্র দেশের ১৩টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানিয়েছে। একই ভাবে দেশে ধর্ষণের ঘটনায় তৈরি পরিসংখ্যানে বলছে, ২০২০ সালে ১ হাজার ৬২৭ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৩ জন। এ ছাড়া গৃহকর্মী নির্যাতন ৪১, যৌন হয়রানি ১৯৬ এবং অ্যাসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২২টি।
বেসরকারি সংগঠন মহিলা পরিষদ বলছে, ২৮৪ টি বাল্য বিবাহের খবর এ বছর প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮৫ জনের বাল্য বিবাহের খবর প্রকাশিত হয় গত সেপ্টেম্বরে। ২০২০ সালে বাল্য বিবাহের খবর প্রকাশিত হয় ৮৪টি। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও কেন্দ্রীয় ভাবে সরকারের কাছে বাল্য বিবাহের কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সহযোগী একটি দৈনিক পত্রিকা ৯টি জেলার ৭৬টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বলছে ৭ হাজার ৬৭৭ টি বাল্য বিবাহের তথ্য পাওয়া গেছে।
সমাজ-চিন্তাবিদরা বলছেন, পরিবারে নারীর প্রতি অসহনশীল আচরণ প্রবণতা থেকে নির্যাতন বাড়ছে। ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যু দ- সরকার করলেও দেশে ধর্ষণের হার কমছে না। প্রভাবশালীদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় এবং তদন্তে গাফিলতির জন্য অনেক ধর্ষক বেঁচে যাচ্ছেন। তবে সামাজিক শৃঙ্খলা ও পারিবারিক শাস্তির জন্য নারীর প্রতি আস্থাশীল হয়ে তাদের নিরাপদ বিচরণ আবশ্যক। ঘরে বাইরে, গন-পরিবহনে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার যে লাগামহীন প্রতিযোগিতা চলছে তা আইনের বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হবার কারণে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি কখনো সমাজে বা জাতীয় ক্ষেত্রে শান্তি, অগ্রগতি আনতে পারে না। আজ বাংলাদেশের নীতি নির্ধারনী ক্ষেত্রে নারীদের জয়জয়কার। সেখানে নারীর অবমাননা কোনো ভাবেই কাম্য হতে পারে না। পারিবারিক সহাবস্থান ও আস্থার মাধ্যমে শান্তির সংসার ধর্ম পালন করতে হবে। সমঝোতা, সমন্বয়ের মাধ্যমে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে সবাইকে।