স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের চলমান নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিজয়ের তালিকা ক্রমান্বয়ে ছোট হচ্ছে। এ বছরের এপ্রিল ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ৩৬৫ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭৬ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৫৯ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। আর ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত হন ৫৪ শতাংশ সরকার দলীয় প্রার্থী। ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৩৯৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৯০ টিতে বিজয়ী হয়েছেন। প্রাপ্ত ৭৯৬ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বাকিরা হচ্ছেন বিভিন্ন দলের। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী ৭৫ জন সহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করছে। তবে স্থানীয় নেতারা অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট-যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে অনেকেই স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়ে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের হারিয়েছেন। বেশ কিছু ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা দুরের কথা, জামানত রক্ষা করার মতো ভোটও পান নি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে, কয়েকটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা শত ভোটেরও কম ভোট পেয়েছেন।
২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিল। ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ৪ হাজার ১০৪ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিল ২ হাজার ৬৫২ টি ইউনিয়নে। অর্থাৎ প্রায় ৬৫ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদে জয় পেয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু এবারের পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্রমেই বিজয়ের তালিকা ছোট হচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম ধাপের নির্বাচন। সেই ফলাফল জানবার জন্য আমাদের সেসময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ উন্মুক্ত রেখেছিল। সে গুলোয় কোন মনোনয়ন দেয়া হয় নি। ফলাফলে দেখা যায় ৫১ দশমিক ৪৯ শতাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। ফরিদপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। বোয়লমারি উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ৯ টিতেই হেরেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এরমধ্যে জামানত রক্ষা করার মতো ভোট পান নি দলের তিন প্রার্থী। এর আগে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চর-ভদ্রাসনের ১৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪ টিতেই পরাজিত হয়েছেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা।
মূলত: দলীয় কোন্দন, স্থানীয় সাংসদের পক্ষপাতিত্ব, প্রার্থী মনোনয়নে তৃনমূলের মূল্যায়ন না করা সহ নানা কারণে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা খুব সহজে মনোনীত প্রার্থীদের হারাতে সক্ষম হয়েছেন। আওয়ামী লীগ শুধু দেশের প্রবীণ দলের মধ্যে অন্যতম নয়, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শত ভোটের কম ভোট পাবেন বা জামানত হারাবেন তা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। রাজনীতির মাঠে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা প্রচলিত আছে, তবে কি এসব প্রার্থী শত ভোটের কম ভোট পাবেন বা জামানত হারাবেন তা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। রাজনীতির মাঠে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা প্রচলিত আছে, তবে কি এসব প্রার্থী সেই পথেই হেঁটেছেন? দলীয় মনোনয়নে বিজয়ী হলেও নির্বাচনী যুদ্ধে আশানুরূপ ভোট না পাওয়া কিসের ইঙ্গিত? তবে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় আশানুরূপ ভোট না পাওয়া কি ইঙ্গিত করে। তবে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় বলা যায়, দলীয় মনোনয়নকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনগণ বিদ্রোহী প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। সেক্ষেত্রে বলা যায় জনগণ আওয়ামী লীগের বিকল্প আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য-কারীদের দল থেকে বহিষ্কার ও দলীয় কোনো পদে না রাখার ঘোষণা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কি হবে?