বিশ্ব করোনা মহামারীতে বিধ্বস্ত। দুই বছর ধরে বিশ্বকে দাপিয়ে বেড়ানো করোনাভাইরাসের মহামারি শুধু অর্ধকোটির বেশি মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি, বিশ্ব অর্থনীতিকেও রীতিমতো বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও তার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটনসহ বিভিন্ন সেবা খাত ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলো। অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখানে ক্ষতির পরিমাণ ৫৮ শতাংশ। ক্ষতির নিরিখে তার পরের অবস্থান হচ্ছে শিল্প খাতের, ক্ষতি হয়েছে ৩৪ শতাংশ। শুধু লকডাউনের ৬৬ দিনের ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত বলেন, এ সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি নেমে এসেছিল ৩৫ শতাংশে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২১তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, অর্থনীতির এই ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার পাওয়া এক বাজেটে সম্ভব নয়। এর জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট গণতান্ত্রিক কর্মকৌশল নিতে হবে। সম্মেলনে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, এজন্য কাঠামোগত সংস্কার জরুরি হয়ে উঠেছে।
এটি স্পষ্ট যে, অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আগেও অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত নিয়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন। সেসব তথ্যেও আমরা দেখেছি অর্থনীতি কিভাবে সংকুচিত হয়েছে। উদ্যোক্তা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কিভাবে সর্বস্ব হারানোর অবস্থায় চলে গেছেন এবং কর্মসংস্থান হারানো বা আয় কমে যাওয়ার কারণে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শ্রেণির মানুষ কিভাবে অতিদরিদ্রের কাতারে চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে শিল্প খাত ও দরিদ্র শ্রেণিকে রক্ষায় সরকার কিছুকিছু প্রণোদনামূলক কর্মসূচি নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকার এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ বা নীতি কৌশল গ্রহণ করেছে, তা ছিল কিছুটা দায়সারা গোছের। করোনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এ ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র শ্রেণিকে রক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি নিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে।
ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন ইউরোপ-আমেরিকায় আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য দেশেও। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দ্রুত বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা। ইউরোপ-আমেরিকায় নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। বিমান চলাচল ক্রমেই সীমিত করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকা-ও ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশেও করোনার নতুন ঢেউ শুরু হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এরইমধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এই নতুন ঢেউ আটকাতে না পারলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শুধু ব্যাহত হবে না, অর্থনীতিতে নতুন করে ধসও নামতে পারে। করোনার নতুন ঢেউ রুখতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।