করোনা ভাইরাসের আতংকের মধ্য দিয়ে বিদায় হলো ২০২১ সাল। করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট অমিক্রনের সুনামিতে অস্থির বিশ্ব। করোনার অমিক্রন ও ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে গোটাবিশে^র স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নতুন বছর ২০২২ শুরু হচ্ছে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে অমিক্রন। গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দু’সদস্যের অমিক্রন শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত দেশে অমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে টিকা দান বিশেষ ক্যাম্পেইন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা টিকা দানে গতি বাড়াতে ইপিআইয়ের শক্তি কাজে লাগিয়ে মাসে ৩ কোটি ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার খবর জানা যায়। এরপর থেকে কয়েক দফায় সংক্রমণ কম-বেশি হতে দেখা যায়। তবে করোনা পরিস্থিতি সবচে খারাপ আকার ধারণ করে গত জুন-জুলাই মাসে। গত ২৬ জুন থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় করোনা সংক্রমণের কারণে। সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য গন-টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। দেশে এ পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ মিলে মোট ১২ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৭ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন দেশে টিকার মজুদ আছে ৯ কোটি ৪৬ লাখের বেশি। তাই নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামের কেন্দ্র-গুলোয় টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে।
সারা দেশে ৪ হাজার ৬১১টি ইউনিয়ন রয়েছে এবং প্রতি ইউনিয়নে ৯টি করে ওয়ার্ড আছে। প্রতি ওয়ার্ডে ইপিআই টিকা কেন্দ্র রয়েছে ২৪টি করে। সে হিসেবে ইপিআই কেন্দ্র রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার। এসব কেন্দ্রে নিয়মিত শিশু ও নারীদের টিকা দেওয়া হয়। ফলে ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষ প্রয়োজনীয় টিকা পেয়ে থাকে। এটা জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। পরিকল্পনা হচ্ছে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করে মাসে ৩ কোটি ৩২ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ-কর্মী ও স্থানীয় এনজিও কর্মীদের যুক্ত করে টিকা দানের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে। ইপিআইয়ের এ ক্যাম্পেইনে সিনোফার্মা, সিনোভ্যাক, ফাইজার অ্যাস্টাজোনেকার টিকা ব্যবহার করা হবে।
প্রথমে ১৮ বছরের বেশি বয়সের মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করে সরকার। ওই বয়সের ৬২ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রথম ডোজ এবং ৪৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন। পরবর্তীতে ১২ বছর থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোরদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। তবে সর্বশেষে অবস্থা হচ্ছে, যে দেশের সব জেলায় একই গতিতে টিকা দান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে কিছু জেলা টিকা গ্রহণে পিছিয়ে গেছে।
আশাকরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পিছিয়ে যাওয়া জেলা-গুলোয় টিকা দানের গতি বাড়াবার ব্যবস্থা নেবেন। ইপিআইয়ের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম টিকা দানের গতি বাড়াবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের সিংহভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে। আমরা এ ক্যাম্পেইনের সফলতা কামনা করি। সাথে প্রত্যাশা রইলো, টিকা গ্রহণের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই চলবেন এবং করোনাকে পরাজিত করবেন। নতুন বছর হোক করোনা-মুক্ত বিশ্ব।