বছরের প্রথম দিনে শিক্ষাবর্ষ শুরু হবার সাথে সাথে উৎসব করে বই বিতরণের উৎসব শুরু হলেও গত দু’বছর থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এবারো আনুষ্ঠানিক বই উৎসব না হলেও বছরের প্রথম দিনে বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। নতুন বই পাওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছিয়ে দিচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপা হলেও মাধ্যমিক স্তরের সব বই ছাপার কাজ এখনো শেষ হয় নি। এবারে মাধ্যমিকের বিনামূল্যের প্রায় পৌনে ২২ কোটি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ কোটি বইয়ের। বাকি বই ছাপাতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড।
বছর শেষে করোনার প্রকোপ কমে এলেও নতুন বছরের শুরুতে আবারো করোনার সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের ক্লাসের সব ক্লাস পরিচালনা না করে সীমিত পরিসরে ক্লাস নেবার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মার্চ পর্যন্ত দেখা হবে। এর মধ্যে সংক্রমণ না বাড়লে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে। তাই স্বল্প পরিসরে ক্লাস নেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে অনুসারে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতি দিন চারটি বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হবে। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে প্রতিদিন তিনটি করে ক্লাস করবে। নবম ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য সপ্তাহে দু’দিন করে ক্লাস নেওয়া হবে। এ দু দিনের প্রতিদিন তিনটি করে বিষয় পড়ানো হবে। সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য সপ্তাহে একদিন তিনটি করে বিষয়ের ক্লাস করা হবে। প্রাথমিক শ্রেণীর ক্লাস গুলো হবে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী।
শিক্ষা মন্ত্রী বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনলাইনেও শ্রেণী কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। বিগত দু’বছর করোনা মহামারি কালে লক-ডাউন চলাকালে সব কিছু বন্ধ থাকার সময় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও গ্রামাঞ্চলের অনেকের পক্ষে মোবাইল না থাকার কারণে ক্লাসে অংশ নিতে পারে নি। তবে টেলিভিশনের ক্লাসগুলো শিক্ষার্থীদের উপকারে এসেছে। তাই যদি না হবে, এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিরাট অংকের শিক্ষার্থীরা পাশ করলো কি ভাবে? জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি। কাজেই অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালু রাখা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
বই উৎসবের আনন্দ শিক্ষার্থীরা না পেলেও নতুন বই পাওয়ার আনন্দ তাদের নতুন ক্লাসে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। যে বইগুলো এখনো শিক্ষার্থীরা পায় নি, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। প্রতি বছর সময় মতো বই ছাপার কাজ শেষ হলেও এবার কেন দেরি হলো, তা খতিয়ে দেখে আগামী দিনে যাতে এমন না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনামূল্যে বই দেয়া অনেক দেশের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তবে বাংলাদেশ তা ধারাবাহিকভাবে দিয়ে আসছে, সে জন্য সরকার অবশ্যই অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা পাক এবং দেশের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।