সুস্বাস্থ্য হলো সম্পদ। স্বাস্থ্যবান জনগোষ্ঠী যে কোন দেশের জন্য মঙ্গলজনক। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাই যখন এক হয়ে কাজ করছি, তখন ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্টসসহ (এইচটিপি) সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রডাক্টের মতো নতুন ধরনের পণ্যের বাড়বাড়ন্ত খুবই হতাশাজনক। জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এ ই-সিগারেটে মূলত তরুণরাই আকৃষ্ট হচ্ছেন। প্রচারণাও চালানো হয় সেভাবে। অথচ আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা জানাচ্ছে, ই-সিগারেটে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত। কণ্ঠনালি ও হূদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, ই-সিগারেটের নিকোটিন শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক।
এরই মধ্যে এর ক্ষতিকর প্রভাব টের পেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ মোট ৩৩টি দেশে ই-সিগারেট বা ভেপিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এর বিরুদ্ধে এখনো কোনো উদ্যোগ নিতে দেখিনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিড়ি ও সিগারেটের পাশাপাশি নতুন ধরনের এ হিটেড টোব্যাকোর হুমকি শুধু আমাদের লক্ষ্য অর্জনকেই দীর্ঘায়িত করবে না, নতুন প্রজন্মকেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে ফেলবে। তাই বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা জরুরি।
বর্তমানে তরুণদের বড় একটি অংশ ই-সিগারেটের মাধ্যমে ধূমপানে অভ্যস্ত হচ্ছে। ই-সিগারেট শুধু স্ট্রোক, কণ্ঠনালি বা হূদরোগই নয়। ই-সিগারেট বা ভেপ জুসে ব্যবহূত হয় নানান ফ্লেভারের তরল ই-জুস, যার মূল উপাদান ভেজিটেবল গ্লিসারল ও পৈণ্ঠাপাইলিন গ্লাইকল, যা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিষাক্ত না হলেও এর বাষ্প শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। এসব জুস শ্বাসনালির নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়। এতে থাকা ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (ভিওসি), বিভিন্ন ক্ষুদ্র কণা, ভারী ধাতব কণিকা ও ফরমালডিহাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ শরীরে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের কারণ হয়।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করাটা জরুরি। কারণ এরইমধ্যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনের বেশকিছু ধারা যেমন কার্যকারিতা হারিয়েছে, তেমনি আবার যোগ হয়েছে ই-সিগারেটের মতো নতুন ধরনের পণ্য। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্য, এবং অধুনা আবিষ্কৃত ই-সিগারেট বন্ধে সরকার কার্যকরি পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা।