উন্নয়নে মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি রূপকল্প ঘোষণা করেছেন। গত দু’জানুয়ারি জাতিসংঘ স্বীকৃত উন্নয়নশীল দেশ হিসেব স্বীকৃতি প্রদান আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করেছে এ দেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বক্তব্য খুবই প্রেরনাদায়ী এবং সাহসিকতাপূর্ণ। বক্তব্যে তিনি রবাট ফ্রস্টের কবিতা থেকে উদ্বৃত্ত করেন যার বাংলা মর্মার্থ, চলার পথে যতই অন্ধকারাচ্ছন্ন হোক না কেন, যত বন্ধুর হোক না কেন, যত কণ্টকাকীর্ণ হোক না কেন, সেখানে থেমে থাকবো না। আমাকে চিরনিদ্রায় যাওয়ার আগে আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেব বিশে^র কাছে তুলে ধরতে পাঁচ বছর সময় পাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর তা সম্ভব হলে দেশের মানুষ যেমন এর সুবিধা পাবে তেমনি আধুনিক বিশে^ বাংলাদেশের মর্যাদা অনেকাংশে বাড়বে এবং সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি হবে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের আনন্দের ও গর্বের। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌছাতে প্রধানমন্ত্রী একটি কর্ম কৌশলের কথাও তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। আমরা মনে করি, কর্মকৌশল দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থির করে সে অনুসারে যাওয়া খুবই জরুরি।
উন্নত দেশ হলে আমরা যে সব আর্থিক ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে পাচ্ছি, তা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাবে। সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের সব কিছু অর্জন করতে হবে। অবশ্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অনেক সময় সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। একসময় আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ পেত। কিন্তু কোটা পদ্ধতি উঠে যাবার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্পে এখন তার সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে। এমন সম্ভাবনার দার অন্য ক্ষেত্রেও উন্মোচিত হতে পারে।
আধুনিক বিশে^ উন্নত দেশ মানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, এর সাথে যুক্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ, গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা যুক্ত। বাংলাদেশের আইনের সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গণতন্ত্রের অবস্থাও নাজুক। বাক-স্বাধীনতাও নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা কথা আলোচিত। এমন পরিস্থিতিতে শুধু উন্নতি করলেই হবে না তা টেকসইও হতে হবে। তাই আমরা চাই, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোর প্রতিও সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নজর দিবে। বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে হবে তলাবিহিন ঝুড়ি বলে যাকে একসময় তিরস্কার করা হতো আজ তারা স্বনির্ভর উন্নত দেশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে জাতির মর্যাদা রক্ষায় সবাই এদিকে নজর দেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।