দেশের অধিকাংশ কাস্টম হাউসই রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। বরং দিন দিন ওসব কাস্টম হাউসের ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৬টি কাস্টম হাউসের মধ্যে ৫টি কাস্টমস হাউসের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮শ কোটি টাকা। আইসিডি কমলাপুর শুধু ব্যতিক্রম। ওই সময়ে আইসিডির রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯৪ কোটি টাকা বেশি। আর দেশের প্রধান কাস্টম হাউস চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ে নিম্নগতি বিরাজ করছে। ওইই ধারাবাহিকতায় রাজস্ব আদায়ে শুধু আয়কর ছাড়া অন্য খাতে তেমন বাড়ছে না। মূলত জিরো শুল্ক ও অব্যাহতির কারণে কাস্টম হাউসগুলোর রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়ছে। ফলে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অধিকাংশ কাস্টম হাউস লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ে কমলাপুর আইসিডির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯৪ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রধান কাস্টমস হাউস চট্টগ্রামে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। ঘাটতির দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানেই রয়েছে বেনাপোল কাস্টমস। ওই সময়ে বেনাপোল কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। তবে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতিতে রয়েছে দেশের অন্যতম আরেক কাস্টমস হাউস মংলা। ওই মংলা কাস্টম হাউসের সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। আর আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯৩ কোটি টাকা। ঢাকা কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ কোটি টাকা। আর রাজধানীর অদূরে জুলাই-১৯ থেকে ডিসেম্বর-১৯ পর্যন্ত পানগাঁও কাস্টমস হাউসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫৬ কোটি টাকা। আর আদায় হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসে ঘাটতি ৩৩৫ কোটি টাকা।
এদিকে কাস্টম হাউসগুলোর রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাস্টমস হাউসগুলোর রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আমদানি কমে যাওয়া। পাশাপাশি অব্যাহতির কারণেও কাস্টম হাউসগুলোর রাজস্ব কমছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সদস্য সৈয়দ মোঃ গোলাম কিবরিয়া জানান, কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার মূল কারণ আমদানি আগের তুলনায় কমে যাওয়া। আর দেশের শিল্পায়নের জন্য আমদানি পর্যায়ে কিছু অব্যাহতি দেয়া ছিল। যেমন- মোটরসাইকেল, গাড়ি যারা দেশে তৈরি করবে তাদের কিছু সুবিধা আগেই দেয়া ছিল। এ খাত থেকে আগে ভাল রেভিনিউ আসতো। এখন তা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বৈশি^ক অর্থনীতির নিম্নগতি রয়েছে, যার প্রভাব আমদানিতে পড়েছে। তবে কাস্টমস হাউসগুলোর মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। যাতে কেউ আমদানির ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি না দিতে পারে।