দিনভর গোলাগুলি, যানবাহন ভাংচুর, ব্যালট পেপারে সিলমারা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্ট বের করে দেওয়া, কেন্দ্র দখল ও মারামারি মধ্য দিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর পঞ্চম ধাপে ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বগুড়ায় পাঁচজন, চাঁদপুরে দুইজন এবং গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম ও মানিকগঞ্জে একজন করে নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অনেকে। এর আগে চার ধাপে ২ হাজার ৮৪২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের আগে পরে ব্যাপক সহিংস ঘটনায় সারা দেশে ৮৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সবচে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ৩০ জনের। তবে শুধু ভোটের দিন দ্বিতীয় ধাপে সংঘাতে জড়িয়ে ৬ জন, তৃতীয় ধাপে ৭ জন, চতুর্থ ধাপে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নির্বাচনী সংঘর্ষগুলো হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঝে।
পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের চিত্রও একই। বগুড়া গাবতলি উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকিরের সমর্থকরা পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কয়েক দফা গুলি ছুড়তে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে গণহারে সিল মারা ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে জোর করে ভোট আদায়ের অভিযোগও ব্যাপক। শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজে-শ্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আহারের সময় দুলুখন্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলওয়ার হোসেন ব্যাপারীর সমর্থকদের চালানো এ হামলায় সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে ককটেলের বিস্ফোরণ ও গুলি ছুড়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়া হয়। এখানকার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হলেও ঘটনায় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ১০ জন আহত হয়েছেন।
শুধু সহিংসতা নয়, নির্বাচনী কাজে যুক্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরও কেউ কেউ চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। সিলমারা ও সিল ছাড়া বেশ কিছু ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছ দু’জন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা সালমান সাকিব ও আরিফুল হককে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নৌকা প্রার্থীদের কর্মীরা বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকেরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দু’পুলিশ পরিদর্শক সহ তিন জন আহত হন।
নিদিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পুঠিয়া উপজেলার হাতিদানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক এজেন্টকে ৫ দিনের কারাদ- এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেছে। একই অভিযোগে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গালা ইউনিয়নের ১০ ছাত্রলীগ নেতা কর্মীকে ৭ দিন করে কারাদ- দিয়েছেন ভ্রমমাণ আদালত। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে এক তরুণকে ৬ মাসের কারাদ- ও ২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়াও অনেক ইউনিয়নের কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্বাচনে সহিংসতার দায় নির্বাচন কমিশন অস্বীকার না করলেও কমিশন সচিব বলছেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের কারণে সহিংস ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কমিশন আগে থেকে তৎপর হলে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো যেত। উৎসব মুখর নির্বাচন সহিংস হয়ে ওঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়ও রয়েছে। এখন পর্যন্ত এজন্য কোনো দল দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। এখনো ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের নির্বাচন বাকি। অন্তত: এবার নির্বাচন কমিশন এমন ব্যবস্থা নিবে, যাতে আর প্রাণহানি না ঘটে। নির্বাচন হোক অংশ গ্রহণমুলক। ফলাফল যাই হোক, তা সবাই মেনে নেবে।