পাহাড় হলো পৃথিবীর পেরেক স্বরূপ। পাহাড় পৃথিবীর ভূমিকে স্থিতিশিল রাখতে সাহায্য করে। মাটিকে রাখে শক্তিশালী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পৃথিবীর পেরেক পাহাড়কে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। এতে প্রতিবছর পাহাড় ধস হচ্ছে আর এতে মৃত্যু হচ্ছে বহু মানুষের। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় বা টিলা কাটা নিষিদ্ধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করে আরো কঠোর করা হয়েছে। কিন্তু লাভ কী, যদি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকে। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়া পাহাড় কাটা কিংবা পুকুর ভরাট করা দুটিই অপরাধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। দিনদুপুরে বন বিভাগের পাহাড় কাটা হচ্ছে, কিন্তু বন বিভাগের লোকজন খবরই রাখেন না। এসব রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর আছে, তারাও অবগত নয়। আইন বাস্তবায়নে বিভিন্ন বাহিনী আছে, তাদের পক্ষ থেকেও কোনো বাধা আসছে না।
বাংলাদেশে পাহাড়ের সংখ্যা এমনিতেই অনেক কম। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকায় কিছু পাহাড় ও টিলাসমৃদ্ধ অঞ্চল রয়েছে। প্রতিটি এলাকায়ই দেদার পাহাড় কাটা হচ্ছে। নিচু জমি বা জলাভূমি ভরাটের জন্য যেমন পাহাড় কাটা হচ্ছে, তেমনি ইটভাটায়ও পাহাড়ের মাটি নেওয়া হচ্ছে। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসব পাহাড়-টিলার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষাও অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে প্রতিবছরই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। এসব দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোতে। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম শহরে এমনই এক দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১২৭ জনের। ২০১৭ সালে আরেক পাহাড়ধসের ঘটনায় চার সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬৮ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। ওই সময় গঠন করা তদন্ত কমিটি ৯ মাস অনুসন্ধানের পর যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাতেও নির্বিচারে পাহাড় কাটাকে পাহাড়ধসের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কমিটি পাহাড়ধস রোধে বেশ কিছু সুপারিশও করেছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সেসব সুপারিশ খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে। উপরন্তু পাহাড় কাটাও চলছে পুরোদমে। পাহাড় কাটা রোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। অভিযোগ আছে, এসব প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ কারণে এসব দেখেও না দেখার ভান করেন। পরিবেশ অধিদপ্তর বা বন বিভাগকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তারা জানায়, খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের প্রশ্ন, তত দিনে পাহাড় থাকবে কি?
পাহাড় ও জলাভূমি রক্ষায় দেশের প্রচলিত আইনের শতভাগ বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কক্সবাজারে নির্বিচারে পাহাড় কাটার বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দেখা হোক। যারা পাহাড় কেটেছে সরকার তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেবে এটাই প্রত্যাশা।