আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বলা হলেও গোটা-বিশ্ব এখনো শিশুদের জন্য নিরাপদ হতে পারে নি। সশস্ত্র সংঘাতের সময় শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো বৈশি^ক উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। এরপর ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিগত বছরটিতে বিশ্বজুড়ে নতুন পুরনো সশস্ত্র সংঘাতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা। তাদের অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ঘটেছে প্রাণহানি। আফগানিস্তান থেকে ইয়েমেন, সিরিয়া থেকে ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চল-যুদ্ধ কবলিত। সশস্ত্র সংঘাতে শিশুরা দিশেহারা। জাতিসংঘে শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ এ তথ্য দিচ্ছে। ২০২১ সালের পূর্নাঙ্গ তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও বলা হচ্ছে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘনের ২৬ হাজার ৪২টি ঘটনার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের প্রথম তিন মাস শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কিছুটা কমলেও এ সময় শিশু অপহরণের ঘটনা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
১৯৯৬ সালে জাতিসংঘের শিশু সুরক্ষার বৈশি^ক উদ্যোগ নেয়ার পর গত ১৬ বছরে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার সংঘাত-কবলিত ৩০টির বেশি এলাকায় শিশুদের বিরুদ্ধে চরম ভয়াবহতার অন্তত ২ লাখ ৬৬ হাজার ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছে ইউনিসেফ। আফগানিস্তান ও মিয়ানমারেও শিশুদের অধিকারও ভুলন্ঠিত। ২০০৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫০০’র বেশি শিশু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তানে। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্রোহীদের সাথে শিশুদেরও হত্যা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও নারী শিশু নির্যাতন বেড়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে শিশুরাই এখানে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। মোট ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর মধ্যে ৫৯ শতাংশই শিশু। আর ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ৪৬ জন নারী ও শিশু। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি বলছে, ২০২১ সালে ১ হাজার ২৫৩ নারী ও শিশু ধর্ষণে শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৭৩৮ জন। গত বছর সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছিল আনুমানিক ১৯ হাজার। ১০ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত বছর মামলা ছিল ১১ হাজার ৭৭১ টি। গত বছর বাংলাদেশে ৬০২ টি পারিবারিক সহিংসতার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে ২৮৫ জন নারীকে স্বামী বা স্বামীর পরিবার হত্যা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদ- ঘোষণা করা হলেও ধর্ষণের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না তদন্তের গাফলতি সহ নানা কারণে। দেশের রাজনীতিতে নারী ক্ষমতায়ন হলেও নিরাপদ হয় নি নারী। এমনকি পারিবারিক বলয় ও তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। পারিবারিক নির্যাতনের যে আইন প্রচলিত, তা নিতান্ত প্রতিরোধ মূলক। ফলে পারিবারিক নির্যাতন রোধে আইনটি সংস্কার জরুরি। তাছাড়া শুধু আইন থাকলে হবে না যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। আর বিশ্বকে শিশুদের জন্য নিরাপদ করার দায়িত্ব গোটা বিশ্ববাসীর। যুদ্ধ সহিংসতা যাই ঘটুক না কেন শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব সচেতনতা সবার মাঝেই বাড়াতে হবে।
আমরা আশা করবো আর কোনো শিশু যুদ্ধ সহিংসতায় প্রাণ হারাবে না, রক্ত ঝরাবে না। প্রতিটা দেশে প্রতিটা শিশুকে নিরাপদে বড় হতে দিন। তারাই তো তাদের দেশের আগামীর কর্ণধার। তাদের অপমৃত্যু কারো কাম্য হতে পারে না।