বাংলাদেশ নানা দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা কবলিত দেশ। সড়ক দুর্ঘটনা এর মধ্যে অন্যতম। দেশে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়ছে। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নতুন সড়ক আইন হয়েছে। মহাসড়কে শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ। ডিভাইডার বসানো হয়েছে। তার পরও সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যানও নেই।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর মাসে দেশে ৩৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৮ জন নিহত এবং ৪৯৭ জন আহত হয়েছে। ১৬৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৮ জন নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৪২.৫৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩.৬০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৩০.৩৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৯ জন, যা মোট মৃত্যুর ১৬.৫০ শতাংশ। সোমবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার স্কুলে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটি ট্রাকের চাপায় নিহত হয়েছে তিন শিক্ষার্থী। আরো চার জেলায় গত শনিবার রাতে ও রোববার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সাতজন।
এটি স্পষ্ট যে, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, মাত্রাতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালানো, পথে অন্য যানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণেই তো বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে আছে পরিবহনের ফিটনেস ঠিক না থাকা। এসব দেখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চয় আছে। তারা কি নিবিড় তদারকি করছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত দুর্ঘটনা ঘটে তার সবই ঘটে অবহেলার জন্য। আর এই অবহেলা হচ্ছে মূলত পরিচালনা বা প্রায়োগিক স্তরে। একটা কিছু উন্নয়নের পর এর পরিচালনার দিকে নিবিড় নজর দিতে হয়। সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে কারা যানবাহন চালাবে, মাঠ পর্যায়ে যানবাহন ও রুট নজরদারি কারা করবে, তাদের কে নিয়ন্ত্রণ করবে, ওপরের দিকে কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব কতটুকু থাকবেÑএ বিষয়টি সুস্পষ্ট ও জবাবদিহিমূলক করা দরকার। আমাদের সড়কে যেমন নছিমন-করিমন বা ভটভটিসহ আরো অনেক রেজিস্ট্রিবিহীন যান আছে, তেমনি আছে যান চলাচলে স্বেচ্ছাচারিতা। এর বিপরীতে আমাদের কর্মকর্তাদের কি কোনো জবাবদিহি আছে?
সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের সচেষ্ট হওয়া জরুরী। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপোশ করা যাবে না। নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।