গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৬টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩টিতে নৌকার প্রার্থীর বিজয় হয়েছে। আবার ৩টিতে তৃতীয় স্থান পেলেও ভোটের ব্যবধান ছিলো অনেক। সবচেয়ে বেশি ব্যবধান থাকা মুক্তিনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসান হাবিবের কাছে ৪ হাজার ৬৭৬ ভোটে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মো: আরশাদ আজিজ। এছাড়াও পদুমশহর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল হকের কাছে ৩ হাজার ৯৪৮ ভোটে পরাজিত হয়ে তৃতীয় হন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী এএসএম মোজাহিদুল হক। কচুয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী খন্দকারের কাছে এক হাজার ৬৯৭ ভোটে পরাজিত হয়ে তৃতীয় হন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বকুল।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নে ৭ হাজার ২৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মফিজুল হক (স্বতন্ত্র), তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৌহিদুজ্জামান স্বপন পান ৫ হাজার ১৬৯ ভোট, ভরতখালীতে ৩ হাজার ৯৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ফারুক হোসেন (স্বতন্ত্র), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাফরুল আলম জুয়েল (স্বতন্ত্র) পান ৩ হাজার ৩২২ ভোট, সাঘাটায় ৭ হাজার ৫৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মোশাররফ হোসেন সুইট (নৌকা), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফরহাদ হোসেন (স্বতন্ত্র) পান ৬ হাজার ৯২৯ ভোট, মুক্তিনগরে ৫ হাজার ৮৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আহসান হাবিব লায়ন (স্বতন্ত্র), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মইন প্রধান লাবু (স্বতন্ত্র) পান ৩ হাজার ৫৪০, কচুয়ায় ৫ হাজার ৬০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন লিয়াকত আলী খন্দকার (স্বতন্ত্র), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুবুর রহমান (স্বতন্ত্র) পান ৪ হাজার ৪০ ভোট, হলদিয়ায় ৩ হাজার ৩৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম নৌকা), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওমর আমিন (স্বতন্ত্র) পান ২ হাজার ৪২৩ ভোট, জুমারবাড়ী ইউনিয়নে ৫ হাজার ১১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আমিরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), নিকতটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহফুজার রহমান (স্বতন্ত্র) পান ৪ হাজার ৪৯৮ ভোট, কামালেরপাড়ায় ১১ হাজার ৭৭৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন শাহিনুর ইসলাম সাজু (স্বতন্ত্র), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল ওয়াদুদ (নৌকা) পান ৮ হাজার ৪৭৮ ভোট এবং বোনারপাড়া ইউনিয়নে ৭ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন নাছিরুল আলম স্বপন (নৌকা), তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান কবির (স্বতন্ত্র) পান ৫ হাজার ৯১১ ভোট। এদিকে হেরে যাওয়া নৌকার প্রার্থী অন্যন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে কম ভোট পাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে ভোট গ্রহনের পরের দিন থেকেই। তবে প্রায় দুই যুগ ধরে এ এলাকায় আ.লীগের দলীয় অন্ত-কোন্দল, দুভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা উপজেলা কমিটির কার্যক্রম, প্রার্থী বাছাইয়ে নিজ গ্রুপের প্রার্থীর প্রাধান্য, ক্ষমতার প্রভাব ও একই দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের গ্রুপিং নৌকার ভরাডুবির কারণ বলে মনে করছেন এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অবশ্য এসব দ্বন্দ্ব গ্রুপিং ভোটের আগে আরও প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। উপজেলার কচুয়া, সাঘাটা ও পদুমশহর ইউনিয়নে আ.লীগের দুই গ্রুপের প্রকাশ্য মহড়া, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, সংঘর্ষ হয়েছে। নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মী সমর্থক আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে।