রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে ঈশিতা জাহান (২৫) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী মুনিম সরকারকে (২৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আসামি মুনিম সরকারকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খাগড়াবন্দ এলাকার পশ্চিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃত মুনিম ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তৈয়ব আলীর ছেলে।
নিহত গৃহবধূর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, আত্বীয়তার সুবাধে পরিচয়, পরে প্রেমের সর্ম্পক। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রেমের সম্পর্ক ধরে পরিবারকে না জানিয়ে ঈশিতা জাহানকে বিয়ে করেন মুনিম সরকার। চার বছরের মাথায় তাদের সংসার জীবনে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর গঞ্জিপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান ঈশিতা। কিন্তু তাদের বিচ্ছেদের এক বছর পার না হতেই ২০২০ সালের শেষের দিকে পরিবারের সম্মতি নিয়ে আবার ঈশিতাকে বিয়ে করেন মুনিম সরকার।
নিহত ঈশিতার বড় বোন তৈয়বা বেগম জানান, দ্বিতীয়বার ঈশিতাকে বিয়ে করার পর থেকে যৌতুকের দাবিতে মুনিম সরকার প্রায়ই তার বোনকে মারধর করতেন। মাস তিনেক আগে দুই দফায় মুনিমকে তাদের পরিবার দুই লাখ টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুরে মুনিম আরও এক লাখ টাকার জন্য ঈশিতার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন রাতে ঈশিতাকে মারধর করে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
তৈয়বা বেগমের দাবি, তার বোনকে হত্যার পর অসুস্থতার নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছেন মুনিম সরকার। এজন্য শুক্রবার রাত আটটার দিকে তাকে ফোন করে ঈশিতাকে হাসপাতালে ভর্তির কথা জানান মুনিম। কিন্তু ততক্ষণে চিকিৎসকরা ঈশিতাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন।
ঈশিতাকে হত্যার অভিযোগে তার মা মার্জিয়া বেগম বাদী হয়ে থানায় জামাতাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় মুনিম সরকারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে রংপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মুনিম সরকারের পরিবারের কেউ এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে পুলিশ মুনিমকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রী ঈশিতা নিজেই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমা বেগম বলেন, শুক্রবার রাতে ঈশিতা জাহানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তার স্বামী মুনিম সরকার। তার আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় আমরা বিষয়টি তাৎক্ষণিক বদরগঞ্জ থানা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পরে পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছালে লাশ রেখে সটকে পড়েন মুনিম সরকার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, গৃহবধূর গলায় ফোলা জখমসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। লাশ ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মুনিম সরকারকে কালীগঞ্জ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।