নতুন জাতের পেঁয়াজ, কখনো চাষ করি নাই। কেমন হইবে ফলন, কেমন হইবে এই পেঁয়াজ চাষ ? খুব চিন্তাত আছিনো। প্রথমে এই পেঁয়াজ চাষ করার সাহস পাচ্ছিনো (পাচ্ছিলাম না) না। কিন্তু উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ শামসুজ্জামান এবং কৃষি অফিসার উর্মি আপার পরামর্শ ও ওনাদের দেওয়া সাহসে এই পেঁয়াজ চাষ করছি। কিন্তু হামার দেশি পেঁয়াজের চাইতে এইলা পেঁয়াজের ফলনই বেশি হইছে। আর পেঁয়াজগুলাও হইছে বড় ও মোটা। ৫/৬টা পেঁয়াজই এক কেজি হইবে। এই মতন পেঁয়াজ হইলে আর কি নাগে বাহে ? খরচও তো তেমন বেশি হয় নাই। এত অল্প খরচে এত বেশি পেঁয়াজ হইলে কোন কৃষক পেঁয়াজ চাষ করির চাইবে না ? তাও ফির বেশির ভাগ খরচ দেয়ছে কৃষি অফিস। এতেও যদি কৃষক পেঁয়াজ চাষ করির না চায়, তাইলে বুঝির নাইগবে “হয় ওই কৃষক বোকা, না হইলে ওই কৃষক দেশের উন্নতি চায় না”। কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষী ইব্রাহীম সরকার। তিনি উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামের বাসিন্দা। পরিত্যাক্ত ৩৩ শতাংশ জমিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম ও ওই ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামসুজ্জামানের পরামর্শে তিনি গ্রীষ্মকালীন এন-৫৩ (নাসিক রেড) জাতের এই পেঁয়াজ চাষ করেন।
পেঁয়াজ চাষী ইব্রাহীম সরকারের ছেলে শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা একজন প্রান্তিক কৃষক। প্রথমে এই নতুন জাতের পেঁয়াজ চাষ তিনি করতে চাননি। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসার ও এই ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার যখন একাধিকবার আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে এই পেঁয়াজ চাষ করার জন্য তখন মোটামুটিভাবে শঙ্কিত ছিলাম এই পেঁয়াজ চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হবো কি’না। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা অভয় দিয়ে বলেন যে, এই পেঁয়াজ চাষ করে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তিনি ক্ষতিপুরণ দিয়ে পুষিয়ে দিবেন। তখন আমার বাবা এই পেঁয়াজ করতে সম্মত হয়। পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রথমদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয় আমাদের। সাথে পেঁয়াজের বীজতলা বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কেজি পলিথিন দেওয়া হয়। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সব সময় দেখাশুনা করেছেন এবং দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সাথে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আপা। বীজতলা তৈরির প্রায় ৪০ দিন গত ২৪ নভেম্বর বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপন করি। চারা রোপনের পর বালাই নাশক “প্রেসটিসাইট”সহ পেঁয়াজের রোগ দমনের জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক কৃষি অফিস থেকেই দিয়েছেন। এমনকি পেঁয়াজ ক্ষেতে সেচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ প্রায় ২ হাজার ৮০০ টাকাও দিয়েছেন। চারা রোপনের প্রায় দেড় মাস হতে চলেছে। এতেই দেখা যাচ্ছে পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আসলে কল্পনাও করতে পারি নাই যে পেঁয়াজ চাষের মৌসুম না হলেও এই পেঁয়াজের ফলন এত ভালো হবে। আমরা আশা রাখছি আগামী মাস খানিক পরে আমাদের এই ৩৩ শতাংশ জমিতে চাষকৃত পেঁয়াজ উত্তোলন করলে অন্তত ৫০ মণ বা তারও বেশি হবে। তবে আমাদের এই পেঁয়াজের ভালো ফলনের জন্য এই ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান ভাইয়ের অক্লান্ত শ্রম ও প্রচেষ্টা এবং উপজেলা কৃষি অফিসার উর্মি তাবাসসুম আপার আন্তরিকতা ও সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এখানে রংপুর ও ঢাকা থেকেও কৃষি বিভাগের অনেক অফিসার এসে দেখে গেছে। ওনারাও অনেক পরামর্শ দিয়ে গেছেন। যখন যে অফিসার এসে যে পরামর্শ দিয়েছেন তখন সেটাই আমরা করেছি।
রহিমাপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, প্রথমে তো এই কৃষক নতুন জাতের এই পেঁয়াজ চাষ করতেই চাচ্ছিলেন না। তাকে অনেক বোঝানোর পর এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্যার এসে বোঝান এবং কৃষক যদি এই পেঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন তাহলে স্যার ক্ষতিপুরণ দিবেন প্রতিশ্রুতি দিলে তবেই তিনি পেঁয়াজ করতে রাজি হয়েছেন। তবে আমার ব্লকের এই কৃষক বেশি বয়স্ক হওয়ায় ওনার ছেলে শফিকুল ভাই চাষাবাদ দেখাশুনা করেন। কৃষকের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু এখন পর্যন্ত আমি এখানে সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করছি। স্যারও সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মাঝে মাঝে এসে দেখেও যান স্যার এসে। আমরা আশা রাখছি গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করে কোন কৃষকই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। বরং অধিক লাভবান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম বলেন, কৃষি প্রণোদনা ২০২১-২২ এর আওতায় উপজেলার ৪০ জন কৃষকের মধ্যে রহিমাপুর ব্লকের কৃষক ইব্রাহীম সরকারকেও পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষের জন্য অন্যান্য কৃষকদের পাশাপাশি তাকেও বীজ,সার,কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রথমে তিনি এই পেঁয়াজ চাষ করতে না চাইলেও পেঁয়াজের ভালো ফলন হওয়ায় তিনি অনেক খুঁশি। আমি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, প্রত্যেকের ব্লকের পেঁয়াজ চাষীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে এবং প্রত্যেক দিন পেঁয়াজ ক্ষেতগুলো অন্তত একবার করে হলেও পরিদর্শন করতে। সেই সাথে আমি নিজেও প্রতিদিন কোন না কোন পেঁয়াজ ক্ষেত পরিদর্শন করছি এবং কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।