পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষকের নিয়োগ আটকে রয়েছে। আর ওই কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ক্লাস নিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিগত ২০২০ সালের শুরুতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের চাহিদা চেয়েছিল। তাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫৭ হাজার ৩৬০টি শূন্যপদের তালিকা পাঠায়। আর গত দুই বছরে আরো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। ফলে এখন প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে পুলিশ ভেরিফিকেশনে দেরি হওয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আটকে রয়েছে। ৬ মাস আগে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করলেও এখনো ভেরিফিকেশন শেষ হয়নি। তাতে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে চাকরিপ্রার্থীরা। পাশাপাশি শিক্ষক সঙ্কটে থাকা এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় দুই বছর এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত বছরের শুরুর দিকে ওই জটিলতা কাটিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। নিয়োগ দিতে এনটিআরসিএ গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারপর ৩৮ হাজার ২৬৮ জন প্রার্থীকে নিয়োগে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। কিন্তু ওই নিয়োগ ছয় মাস হলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গত সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজ খোলা হয়। ফলে শিক্ষক সংকটের ব্যাপারটি তেমনভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগে শিক্ষক নিয়োগ শেষ করা না গেলে বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের দুই ধরনের ভেরিফিকেশন করতে হয়। স্থায়ী ঠিকানায় এবং প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভেরিফিকেশন করতে হয়।
সূত্র জানায়, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিগত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ হাজার ১৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এক বছরেও তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষ হয়নি। অবশেষে শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ওসব শিক্ষকের পদায়ন দিতে যাচ্ছে। যোগদানের পর তাদের পুলিশ ভেরিভিকেশনের কাজ শেষ হবে। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে দু’শতাধিক প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। তাদেরও যোগদানের পর ভেরিফিকেশনের শর্তে নিয়োগ দেয়া হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট দ্রুত পাঠানোর জন্য এনটিআরসিএ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রতিনিয়ত তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ ওই ভেরিফিকেশন শেষ হতে পারে সে বিষয়ে ব্যাপারে এখনো কোনো তারিখ জানানো হয়নি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভেরিফিকেশনের জন্য ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফেরত এলে দ্রুততার সঙ্গে ছাড় করা হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদার জানান, শিক্ষকদের ভেরিফিকেশন ফাইল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ফাইল ওয়ার্ক শেষ করে ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে ৩৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষকের জন্য দুটি সংস্থার ভেরিফিকেশন চলছে। একবারে অনেক বেশি শিক্ষক হওয়ায় কিছুটা সময় লাগছে।