লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনরোধে “রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদির পন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙ্গন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ” প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। রোববার বিকেলে উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের পাটোয়ারীপাড়া এলাকায় এ প্রকল্পের কাজ উদ্বোদন করেন। এই উপলক্ষে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দের সভপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী লেঃ কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। সে হাসি ফুটানোর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেখানে নদী ভাঙ্গন আছে, সেখানে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের মূখে হাসি ফুটানোর জন্য। আগের সরকারগুলো জনগণের কথা চিন্তা করতেন না। জনগণের দুঃখদুর্দশার কথা, নদী ভাঙ্গনের কথা বিচার বিবেচনা করতেন না। বঙ্গবন্ধর কন্যা শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেছেন নদী ভাঙ্গন কি জিনিষ। জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাগবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা করার, সেই সপ্ন বাস্তবায়ন করতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধ চেয়েছিলেন, একটি সুখি সমৃদ্ধশালী দেশ। আজকে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী দেশ হওয়ার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসীর উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কষ্টটা আমি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করি। কারণ আমার বাড়িও বরিশালের নদীভাঙন এলাকা বামনাতে। আমাদের বাপ-দাদাদের সমস্ত জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধুমাত্র আমার দাদার কবরের জমিটুকু অবশিষ্ট আছে। তাই যাদের জমি যায় তাদের মনে যে কি কষ্ট সেটা আমি অনুধাবন করতে পারি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের দুঃখ দুর্দশা কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের জন্য গত বছরের ১ জুন একনেক সভায় তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এখন এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) বাস্তবায়ন করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব) আবদুল মান্নান বলেন, এখানকার মানুষের দুঃখ দূর্দশা হলো নদী ভাঙ্গন। এই নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মানুষ যখন ভূমিহীন হয়ে যায় অসহায় হয়ে পড়ে তখন তার কিছুই করার থাকেনা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি াাবদুল ওয়াহেদ মুরাদ এবং জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (পরিকল্পনা) এস এম মোস্তফা কামাল, বাপাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অখিল কুমার বিশ্বাস, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শান্তুনু চৌধুরী, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসানাত খান, রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, জাতীয়পার্টি এবং বিকল্পধারার নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনরোধে “রামগতি ও কমলনগর উপজেলাধীন বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদির পন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙ্গন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ” নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত বছরের ১ জুন একনেক সভায় তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন হয়। সম্প্রতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) দরপত্র আহবানসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।