ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ফরেন কমনওয়েলথ এ- ডেভেলপমেন্ট এর অর্থায়নে বেসরকারি সংস্হা সুচনা প্রকল্পের মাধ্যমে পুকুরে হাপা ব্যবহার করে সফলভাবে তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ পূর্বক আয় বৃদ্ধি করেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের বনগ্রামের প্রনতি রানী এবং তার স্বামী গৌরাঙ্গ মালাকার।
গৌরাঙ্গ মালাকার জানান, তিনি সুচনা প্রকল্প থেকে উন্নত মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণের অর্জিত জ্ঞানকে মাছ চাষে ব্যবহার করেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য দপ্তর ও সুচনা প্রকল্পের যৌথ কারিগরি সহায়তায় তার ১৫ শতাংশ পুকুরে প্রথমে পুকুরের ভিতর স্থাপিত হাপাতে ৪ হাজার তেলাপিয়া রেনু পোনা প্রতিপালন করে ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি হলে সেগুলোকে আবার পুকুরে ছেড়ে নিয়মিত খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে সফলভাবে খাওয়ার উপযুক্ত তেলাপিয়া উৎপাদন করেন।
তিনি আরও জানান, তার পুকুরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কেজি তেলাপিয়া ও রুই জাতীয় মাছ উৎপাদিত হয়েছে। নিয়মিত পুকুর থেকে বঁড়শি ও ঝাঁকি জাল দিয়ে মাছ ধরে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পুরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ৩ ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ, ওষুধ ও খাবার ক্রয়সহ পারিবারিক অন্যান্য চাহিদা পুরন করেন।
তিনি আশা করছেন, আগামী জুন-জুলাই এ তার পুকুরে মাছের উৎপাদন বেড়ে প্রায় ৬০০ কেজি হবে, যার আনুমানিক মূল্য হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তার পুকুর থেকে তেলাপিয়া ও কার্প হ্যাচারী মাত্র ৪ কি:মি: দুরে। তাই সেখান থেকে রেনু সংগ্রহ করে আগামীতেও তিনি এই মাছ চাষ অব্যহত রাখবেন বলে জানান। তার এই সাফল্যে এলাকার অন্যান্য মাছ চাষীরাও উৎসাহিত হয়েছেন।
সুচনা-সিএনআরএস প্রতিনিধি শ্যামল কান্তি বৈদ্য ও ওয়ার্ল্ডফিশ প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান এই দুই কর্মকর্তার নিয়মিত পুকুর দেখভাল ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ায় গৌরাঙ্গ মালাকার তাদের ধন্যবাদ জানান।
সুচনা-সিএনআরএস এর শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকল্প সমন্বয়কারী মোস্তফা হায়দার মিলন বলেন, সুচনার মাধ্যমে এ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২৭৮৪ জন উপকারভোগীকে মাছ চাষে সহযোগীতা করা হয়েছে এবং সবাই সুচনা এবং উপজেলা মৎস্য দপ্তর শ্রীমঙ্গল এর কারিগরি সহায়তায় সফলতার সাথে তাদের বসতবাড়ির পুকুরে উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ পূর্বক অতিরিক্ত মাছ বিক্রি করে আয়ের সুয়োগ সৃষ্টি করেছে।
সুচনার ইউনিয়ন সমন্বয়কারী শ্যামল কান্তি বৈদ্য বলেন গ্রামীণ অতি দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ বাড়িতেই পুকুর রয়েছে। এই পুকুরগুলি প্রায়শই পতিত বা আধা-ব্যবহৃত থাকে। কারণ তাদের আধুনিক মাছ চাষ সম্পর্কে জ্ঞান নেই। এই পুকুরগুলো কাজে লাগিয়ে এবং পারিবারিক পুষ্টির জন্য সুচনা প্রকল্প প্রজননক্ষম মহিলাদের পুষ্টি সমৃদ্ধ মাছ এবং শাকসবজি উৎপাদন করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়।
সুচনা প্রকল্পের ওয়ার্ল্ডফিশ শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে অপুষ্টিজনিত সমস্যাগুলো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রজননক্ষম মহিলাদের এবং ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের। ওয়ার্ল্ডফিশ সুচনা প্রকল্পের মাধ্যমে পুকুরে পুষ্টি সমৃদ্ধ মাছ এবং বসতবাড়ি ও পাড়ে শাক-সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারের আয়ের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিশেষত মা এবং ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিশ্চিত করছে।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফারাজুল কবির বলেন, তেলাপিয়া একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং পরিবেশবান্ধব মাছ। বসতবাড়ীর ছোট-বড় পুকুর এবং বানিজ্যিকভাবেও এই দ্রুত বর্ধণশীল মাছ সহজেই চাষ করা যায়। মাছ উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। আমিষ ছাড়াও মাছ থেকে আমরা আয়রণ, ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন-এ ইত্যাদি পাই। এসব উপাদান দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও রোগ প্রতিরোধ করে। তেলাপিয়া আমিষ, পুষ্টি এবং অপরিহার্য ফ্যাটি এসিডের একটি স্বাস্হ্যকর উৎস। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসহ ভিটামিন-বি-৬, বি-১২ এবং ভিটামিন-ডি পর্যাপ্ত পরিমানে আছে। তিনি বলেন, সূচনা প্রকল্পের মাধ্যমে গৌরাঙ্গ মালাকারের পুকুরে জলবায়ু সহনশীল মাছ চাষের অংশ হিসেবে পুকুরে স্থাপিত হাপায় ও পুকুরে তেলাপিয়া মাছ চাষ সফল।