কোভিড ১৯ -এর কারণে গত দুই বছর ব্যবসায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাগণ। আর এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে মাঠে নেমেছে মোটা অংকের দাম বসিয়ে কেজি স্কুলের রকমারি পাঠ্যবই নানা শ্রেণির গাইড বই নিয়ে। খুলনা শহরের ছোট-বড় অর্ধ-শতাধিক কেজি স্কুলসহ খুলনা জেলার মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও কেজি স্কুল গুলোতে আগাম মোটা অংকের ডোনেশন নিয়ে মাঠে নেমেছে পুস্তক প্রকাশকগন। তাঁরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এ চুক্তি সম্পাদন করে পিছনের মন্দা কাটিয়ে সামনের কাতারে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
বিভিন্ন বিদ্যালয় ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাগণ নানা কালারের উচ্চ মূল্য সম্পন্ন চটিবই নিয়ে মাঠে নামে। বিভিন্ন বই বিক্রেতার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধানকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে বশিভুত করে ছাত্র প্রতি ১৩/১৪ খানা বই চাপিয়ে বুকলিস্ট ছাপিয়ে ছাত্র-ছাত্রী অথবা অভিভাবককে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গত দুই বছরে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রতা সমিতির পাঠ্য ব্যবসায়ীরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তাদের ব্যবসায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।২০২০ সালে কেজি স্কুলগুলোতে মোটা অংকের টাকা ডোনেশন দিয়ে বই পাঠ্য করলেও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ষোলো কলা পূর্ণ হয়নি। আর ২০২১ সালেতো একেবারেই বিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ ছিলনা বললেই চলে। সেই কারণে গত শিক্ষা বছরে কেজি স্কুল গুলো ও গাইড বইয়ের ব্যবসা তেমন একটা চলেনি।
যে কারণে চলতি বছর দেশের বড় বড় শহর ও হাট বাজারে অবস্থিত পাঠ্যপুস্তক বিক্রেতা সমিতির আওতাধীন বিভিন্ন দোকান মালিকদের এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া ও প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে স্কুলে স্কুলে গিয়ে গোপন যোগাযোগ শেষে পাঠ্য তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে।
প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চালিত কেজি স্কুল গুলোতে গিয়ে মোটা অংকের ডোনেশন দিয়ে প্রতি শ্রেণিতে ১৩/১৪ খানা চটিবই সেটিং দিয়ে প্রতি শ্রেণিতে আলাদা আলাদা পুস্তক তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকমহল ও শিক্ষকদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা এ প্রতিবেদককে জানান, এ সকল কেজি স্কুলের শিক্ষকরা কোমলমোতি শিশুদের বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে শিশুদের নানামুখী বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত করছে। অনেক শিশু অকালে নানা মানষিক রোগে আক্রান্ত করছে। এ সকল অননুমোদিত পাঠ্যবইয়ের ব্যাপারে শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন মহল এদের জন্য সহনীয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচী নিয়ে মাঠে নামলেও অজ্ঞাতকারণে তা থেমে যায়।
এদিকে পুস্তক ব্যবসায়ীরা প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈধ গাইড বই নিয়ে মাঠে নেমেছে। নানা স্বনামধন্য পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাগণের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে গাইড বই, ডাইরি ও নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছে।প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন বই ও গাইড নিয়ে প্রকাশকগনকে অর্থের বিনিময়ে বশিভুত করে নতুন নতুন গ্রামার, ব্যকরণ, রচনা ও চিঠির আলাদা পুস্তক সহ শ্রেণিওয়ারী আলাদা আলাদা গাইড বই দিয়ে পাঠ্যক্রম ছাপিয়ে শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ সকল নিম্নমানের বই চড়া মূল্যে ক্রয় করতে বাধ্য করা হয়।
এ সব ক্ষেত্রে জেলার সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও পিছিয়ে থাকছেন না বলে অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে। দিঘলিয়ার ফরমাইশখানা নিবাসী মোল্লা কামরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা প্রকাশকদের কাছ থেকে প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন ডোনেশন নিয়ে
ভাগ-বটোয়ারা করে নেন। কোন কোন বিদ্যালয়ে ডোনেশনের টাকা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন সমিতিতে জমা করা হয়। যে টাকা চাকুরি শেষে শিক্ষকদের হিসেব করে দেওয়া হয়।
দৌলতপুরের হোসেন নামক জনৈক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, প্রকাশকগন ডোনেশনের পরিমাণ অনুযায়ী পাঠ্য বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। খুলনার খালিশপুরের মহাসিন এ প্রতিবেদককে জানান, একটা কেজি স্কুলের প্রতি শ্রেনির ছাত্র-ছাত্রীদের ১৩/১৪ খানা পাঠ্যবই চাপিয়ে দিয়ে পুস্তক তালিকা করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সাথে হাতে তুলে দেওয়া হয়। কেজি স্কুল গুলোতে ডোনেশনের ডাক ওঠানো হয়। ডোনেশনের পরিমাণ কম হলে বই পাঠ্য হয়না। কোন কোন কেজি স্কুল বিভিন্ন প্রকাশনীর বই নিয়ে যারা বেশী টাকা দেয় তাদের বই পাঠ্য তালিকায় স্থান পায়।শিক্ষকগণ জানান দেন আমরা ডোনেশন না নিয়ে ভালো বই বাছাই করে পাঠ্য করেছি। কেউ কেউ আবার নির্ধারিত পোশাকের দোকান নির্ধারণ করে মুনাফা লুফছে।
এভাবে প্রতি বছর শিক্ষকগণ বেতনের পাশাপাশি অভিভাবকদের পুঁজি করে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে। অনেক শিশু ও ছাত্র-ছাত্রী তাদের খরচের যোগান দিতে না পারায় ছিটকে পড়ছে শিক্ষাঙ্গন থেকে। বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা খুলনা থেকে কি হবেনা এ ডোনেশন প্রথার অবসান? বন্ধ করা কি হবেনা এ গাইডের ব্যবসা?