চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে ভাপা পিঠা বিক্রির ধুম। বিকেলের পর ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতে বিক্রি করেন এ মুখরোচক খাবারটি। আবার উপজেলার বেশ কিছু স্থানে সকাল বেলায় এ পিঠা তৈরি করতে দেখা গেছে। তবে ভাপা পিঠাকে এ অঞ্চলে ধুপি অথবা ধুপপি বলে ডেকে থাকে। অনেকে এ ব্যবসা করে দৈনন্দিন আয় করে সংসার চালাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রানকেন্দ্র রহনপুরসহ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের ভাপা পিঠা বা ধুপি তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। পিঠার সুগন্ধি এলাকায় সুবাসিত করে তোলেন। এসব ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে কোন ঝামেলা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া শীতের পিঠা খাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল ভ্রাম্যমান পিঠা দোকান। কেউ কেউ সকালে তৈরি করলেও অধিকাংশ দোকান বিকালে ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। তবে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভির বেশি হয়ে থাকে। এ সমস্ত ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দরিদ্র। একটা পিঠা প্রকার ভেদে ৫টাকা থেকে ১২টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
ভাপা পিঠা খেতে আসা ছাত্র আহসানুজ্জামান বলেন, ঢাকায় জন্মস্থান হলেও পরিবারের চাকুরী সুবাধে এ উপজেলায় বসবাস করে থাকেন। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ডাকবাংলো চত্ত্বর সংলগ্ন মোড়ে প্রতিদিন ভাপা পিঠা খাই। আমাদের পাঠ্য বইয়ে অনেক পিঠার নাম পড়েছি ও শুনেছি কিন্তু খাওয়া হয়নি। পরিবারের লোকজন কখনো তৈরি করেন নি। তাই পিঠার দোকানে এসে দেখলে লোভ সামলাতে পারি না। খেতে ভালই লাগে মজাদার খাবারটি।
পিঠা বিক্রেতা সুমন আলী বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি রহনপুর বড় বাজারে পানের দোকান করেন। বিকেলে মতির মোড়ে তৈরি করে বিক্রি করেন এ পিঠা (ধুপি)। তিনি জানান, শীতের সময় পিঠার ব্যবসাটা লাভ জনক হওয়ায় বছরের এই সময়টায় তিনি পিঠা ব্যবসা করে থাকেন। বাড়তি একটা আয় করে থাকেন এ ব্যবসা থেকে।
এ ব্যাপারে রহনপুর পৌর এলাকার পিঠা বিক্রেতা বেলাল জানান, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ভাপা পিঠার কদর বেড়ে যায়। এ বছর শীত পড়ায় সাথেসাথে দোকানে পিঠা বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। তিনি একজন ভ্যান চালক। ভ্যান চালানো বন্ধ করে শীত মৌসুমে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পৌর কার্যালয় সংলগ্ন তেতুলমোড়ে এ ভাপা বা ধুপি পিঠা বিক্রয় করে থাকেন। এ পিঠা তৈরিতে প্রথমে চাউলকে সিদ্ধ করতে হয়, তারপর সিদ্ধ করা চাউল রোদে শুকিয়ে টেঁকিতে বা মেশিনের সাহায্যে আটা করা হয়। এ আটা, গুড় বা খেজুরের গুড়, নারিকেল, আটায় হালকা লবণের মিশ্রিনের পর তৈরি হয় এ ধুপি পিঠা। লাইন ধরে বিক্রি করেন ভাপা বা ধুপি পিঠা। প্রতিদিন তিনি ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। দৈনন্দিন লাভ হয় পাঁচশ থেকে সাতশ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে পুরুষদের পাশাপাশি অনেক গৃহবধু উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের মোড়গুলোতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।এ ভাপা পিঠা বিক্রির লাভের টাকায় তাঁদের সংসার ভালো ভাবেই চলছে।
শিক্ষক আবুল কালম আজাদ বলেন, শীতকালে শ্রমজীবী, রিকশাচালক, ড্রাইভার, শ্রমিক, চাকুরিজীবিসহ অন্যান্য পরিবারের লোকজনের কাছে মজাদার খাবার এ পিঠা। যুগের পরিবর্তনে বর্তমানে গ্রামের পরিবারগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ পিঠা উৎসব। আগে শীত বা নতুন ধান বাড়িতে উঠলেই গৃহবধুরা নতুন পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন। এ দৃশ্য গ্রামে কমে গেলেও বাণিজ্যিকভাবে ভাপা পিঠা বিক্রি হচ্ছে হাট-বাজার ও মোড়গুলোতে। দাম কম হলেও অনেক সুস্বাদু খাবার বলে তিনি জানান। তবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন হচ্ছে কি না সেদিকে কর্তৃপক্ষের সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া দরকার।