সবাই আশা করে ফসলের। আগাছা কেউ ঘরে তুলতে চায় না। সাফল্যটাই প্রত্যাশা করে সবাই, কেউ ব্যর্থতার দায় নিতে চান না। আর তাই গত বছরের মাঝামাঝি সময় শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে যে সংঘাত-সংঘর্ষ ও শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এর দায় কেউ নিতে চাইছেন না। নির্বাচন কমিশন বলেছে, হানাহানির দায় তাদের নয়। যেসব দল ও প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তাঁদেরই এ দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ দায় তাঁরা নেবেন না। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলেই এ হানাহানির ঘটনা ঘটেছে।
নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সংবিধানে স্পষ্ট ধারা আছে। সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যে রূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেই রূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ এখন প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী চেয়েছিল কি না। দ্বিতীয়ত, সেই কর্মচারীরা তাঁদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন কি না। যদি করে থাকেন, তাহলে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এত হানাহানি ও মারামারি হওয়ার কথা নয়। আর যদি উল্লিখিত কর্মচারীরা তাঁদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করে না থাকেন, তখন প্রশ্ন আসে কমিশন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠিতই হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সুন্দর, অবাধ, ও নিরপেক্ষ করা। নির্বাচনকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই কাজ করতে নির্বাচন কমিশন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে এই কমিশনের দরকারই বা কী? এটি নিশ্চিত যে, এবারের ইউপি নির্বাচন প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি। হয়েছে জবরদস্তিমূলক। যিনি যত ক্ষমতাবান, তিনিই তত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন এবং নিজের পক্ষে ফল নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার কেউ কেউ ফল নিজের পক্ষে নিতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাই এ নির্বাচনে আর যা-ই হোক, জনগণের রায়ের প্রতিফলন হয়েছে, এমনটি বলা যাবে না।
পাঁচ দফা নির্বাচনে প্রার্থীসহ যে শতাধিক মানুষ মারা গেলেন, এর দায় কোনোভাবে নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না। নৈতিক দায় এড়াতে পারেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও। আওয়ামী লীগ নিজেকে সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত দল বলে দাবি করে, এ নির্বাচনে প্রমাণিত হলো দলের মধ্যে বিন্দুমাত্র শৃঙ্খলা নেই। সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, দলের স্থানীয় নেতারা নিজেদের ক্ষমতাবলয় বাড়াতে যতটা উদ্গ্রীব, দলের নীতি-আদর্শ ও নূন্যতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় ততটাই উদাসীন। আগামীতে নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে এটাই প্রত্যাশা।