পৌষ মাসের শেষ দিনকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ‘পুহুরা’। প্রতিবছর এই দিনে একই সময়ে একই স্থানে ২৬২ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে খেলাটি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ২৬৩ তম খেলা আগামী ৩ শে পৌষ ১৪ জানুয়ারী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। পিতলের মোড়কে তৈরি ৪০ কেজি ওজনের একটি বল নিয়ে কাড়াকাড়ি। ময়মনসিংহ অঞ্চলের জনপ্রিয় এই খেলার নাম ‘হুমগুটি’খেলা। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে লক্ষীপুরের বড়ই আটা বন্দ। খেলা শুরুর আগে ময়মনসিংহ-ফুলবাড়ীয়া সড়কের অদূরে ভাটিপাড়া,বালাশ্বর, তেলিগ্রামের সংযোগস্থল নতুন সড়কে নামে মানুষের ঢল।
জানা যায়, আড়াইশ বছর আগে মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশাল উপজেলার বৈলরের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরুথেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে। একই জমিদারের ভূ-খন্ডে দুই নীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে প্রতিবাদী আন্দোলন। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মিমাংসা কল্পে লক্ষীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে ‘তালুক-পরগনার সীমানায়’ এ গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। গুটি খেলার শর্ত ছিল গুটি গুমকারী এলাকাকে ‘তালুক’ এবং পরাজিত অংশের নাম হবে ‘পরগনা’প্রতি বছর পৌষের শেষ বিকেলে এই খেলাকে ঘিরে অতি প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষীপুর, বড়ই আটা,ভাটিপাড়া বালাশ্বর,শুভরিয়া,কালীবাজাইল,তেলিগ্রাম ,সারুটিয়া, গড়বাজাইল, বাসনা, দেওখোলা, কুকরাইল, বরুকা, ফুলবাড়ীয়া পৌর সদর, আন্ধারিয়াপাড়া, জোরবাড়ীয়া, চৌধার, দাসবাড়ী,কাতলাসেনসহ আশপাশের ১৪ থেকে ১৫টি গ্রামে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। এ উপলক্ষে ঈদের উৎসবের মতো নতুন জামা-কাপড়ও কিনে। এ খেলায় কোনো রেফারি থাকে না। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে খেলা। কখনো দুই-তিনদিন পর্যন্ত খেলা চলার রেকর্ড আছে। একেক এলাকার একেকটি নিশানা থাকে। ওই নিশানা দেখে বোঝা যায় কারা কোন পক্ষের লোক। ‘গুটি’ কোন দিকে যাচ্ছে তা মুলত চিহিৃত করা হয় নিশানা দেখেই। নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। এভাবে গুটি ‘গুম’ না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা।