জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সারাদেশে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই মোতাবেক গত বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম দফায় ৬৯ হাজার ৯০৪ টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত জুন মাসে আরো ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে মাথা গোজার ঠাই দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দফায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ২৪০ টি পরিবার তাদের ঠিকানা পেয়েছেন। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে তৃতীয় দফায় আরো ৫০ হাজার পরিবারকে এবং চতুর্থ দফায় আরো আড়াই লাখ পরিবারকে নতুন ভাবে ঘর হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। সে অনুসারে নতুন ঘর নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। তবে আগের নকসায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। আগে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আশা করা যায় আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এমন জন-বান্ধব একটি কর্মসূচিকে ঘিরেও নানা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। কোথাও ঘর দেওয়ার কথা বলে গৃহহীনদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। আবার ঘর বুঝিয়ে দেবার পর ঘরের দেওয়াল ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ কেউ আহতও হয়েছেন। ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকার বিব্রত হন। তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় টিম গঠন করে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে পাঠানো হয়। তাছাড়া নতুন ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নদীর ধারে, ডোবা কিংবা নিচু জায়গায় ঘর নির্মাণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে উপকার-ভোগীদের সাথে কোনো অবস্থাতেই কোনো আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। কাঠ, টিন, ইট, বালু ও সিমেন্টের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের বানের পানিতে সব হারানো মানুষের ঠিকানা দিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বঙ্গবন্ধুর শত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঠিকানা-হীন মানুষকে ঠিকানা দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। সে অনুসারে কার্যক্রমও চলবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কেউ কেউ গৃহহীন না হয়েও ঘর পেয়েছেন, আবার প্রকৃত গৃহহীন বঞ্চিত হয়েছেন ঘর পেতে। এমন অভিযোগ যেন আগামীতে না ওঠে। বিগত দুই ধাপে গৃহ বিতরণ নিয়ে যে অভিযোগগুলো উঠেছে তা যথাযথ তদন্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নইলে আগামীতেও এমন অভিযোগের ডালপালা বিস্তার হতে থাকবে। আর পুলিশের নিয়োগে সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া বরিশালের কলেজ-ছাত্রী আসপিয়া ইসলামের স্থায়ী ঠিকানার অভাবে চাকুরী না হওয়ার ঘটনা সবার জানা। তবে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে সে পুলিশের চাকরী পাচ্ছে, এ খবর সবাইকে আপ্লুত করেছে। তাই আমরা আর কাউকে ঠিকানা-হীন দেখতে চাই না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের ঠাই হোক। দিন শেষে রাতে শান্তিতে যেন সবাই ঘুমাতে পারে। জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হন সবাই।