রংপুরের পীরগাছায় বাড়ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার চাষ। স্বল্প খরচ আর অল্প সময়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সরিষার চাষ। হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে সরিষার খেতগুলো। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় সরিষা চাষীদের মূখে হাঁসির ঝিলিক দেখা গেছে। এর সাথে বাড়তি যোগ হয়েছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির দল মধু আহরণ করছে সরিষা খেত থেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এবারে ৫৮০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষার চাষ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে এক হাজার ৩৬০ জন কৃষককে দেয়া হয়েছে সরিষা বীজ ও সার। এছাড়াও রাজস্ব খাত থেকে ৩৩ শতাংশ জমির প্রদর্শনী প্লট হিসেবে ৭৮ জন কৃষককে বীজ, সার ও অন্যান্যে উপকরণ দিয়েছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
সরিষা খেতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ না করায় দ্রুত বেড়ে উঠেছে সরিষার গাছগুলো। অনেকেই আমন ধান কেটেই সরিষা চাষ করেছেন। এখন সরিষা উত্তোলন করে বোরো ধানের চাষাবাদ করবেন। দুই মৌসুমের মাঝে অবশিষ্ট সময় কৃষকরা জমি পতিত না রেখে সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এছাড়াও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সরিষা চাষ করতে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মাছ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ। তবে চরাঞ্চলগুলোতেও বেশি পরিমান চাষ করা হয়েছে সরিষা। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য এখন সব মানুষের চোখে। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ছুটছে মৌমাছির দল। আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে সরিষা সংগ্রহের কাজ।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল লতিফ জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে চাষীরা। তাছাড়া সরিষা চাষের ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরবর্তীতে ইরি-বোরো চাষাবাদের সময় সার ব্যবহারের খরচ কমে আসে।
কৃষকরা জানায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ অধিক লাভজনক। সরিষা উৎপাদনে সময় কম লাগার ফলে বছরে একই জমিতে অনায়াসে তিনটি ফসল চাষ করা যায়।
উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদের চর এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, চরের জমিগুলোতে ফসলের খেতে সেচ দেওয়া কষ্টকর। তাই সরিষার জমিতে বেশি সেচ দেওয়া লাগে না বলেই সরিষা চাষ করেছি।
কৈকুড়ী ইউনিয়নের চালুনিয়া গ্রামের কৃষক জমির হোসেন বলেন, আমাদের এ জমি গুলোতে অন্য আবাদের চেয়ে সরিষার ফলন ভালো হয়। আর অল্প খরচে অধিক ফলন। তাই বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি। এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ক’দিন পর ফল আসবে।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম বলেন, কৃষি বিভাগের উৎসাহ ও সহযোগিতায় কৃষকরা সরিষা চাষে এগিয়ে আসছে। অল্প সময়ে অল্প খরচ আর স্বল্প শ্রমে বেশি মুনাফা পাওয়ায় প্রতি বছরই এখানে সরিষার চাষ বাড়ছে। বর্তমানে বারি-১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা-৪, ৯ সহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ করা হচ্ছে।