সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বিদের একটি উল্লেখ যোগ্য উৎসব হল পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি।
নানা আয়োজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার হিন্দু ধর্মালম্বিরাও উৎসবটি পালন করে। উৎসব উপলক্ষে বিকালে পৌরশহরের রাধানগরে বের হয় কয়েকটি কীর্তনীয় দল।
এসময় প্রতিটি ঘরে ঘরে লুট দেওয়ার পাশাপাশি উৎসর্গ করা হয় নানা জাতের ফল মিষ্টিসহ তিল কদমা।
রীতি অনুযায়ী বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন এই উৎসব পালন করা হয়। পৌষ মাসে সূর্য যখন ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে, তখন মকর সংক্রান্তি পালিত হয়। এই উৎসব উত্তরায়ণ নামেও পরিচিত।
পৌষ সংক্রান্তির দিন পরিবারের সবাই সকাল সকাল স্নান সারেনন। পরে নারীরা উঠোনে ও ঘরে নানা ধরনের আলপনা আঁকেন। দুপুরে পিতৃপুরুষ ও সূর্যদেবের পুজো করার নিয়মও প্রচলিত আছে।
হিন্দুদের প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে মকর সংক্রান্তি বছরের সর্বপ্রথম উৎসব। এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয়। তবে হিন্দু ধর্মে, এই উৎসবকে ঘিরে শোনা যায় নানা লোককথা।
আখাউড়া দেবগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক অলক কুমার চক্রবর্তী জানান
এ দিন রসনার তৃপ্তিও হয়। গুড়, চাল, দুধ দিয়ে নানা ধরনের উপাদেয় মিষ্টি, পিঠা, মিষ্টান্ন ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই বিশেষ দিনটিতে সূর্যদেব তার পুত্র শনি দেবতার প্রতি ক্ষোভ ভুলে যান এবং তার গৃহে সূর্যদেবের আগমন ঘটে। তাই এই দিনে সকলে মিলিত হয় এবং মিষ্টি মুখ করে সম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করে।
রাধানগর রাধামাধব আখড়ার পুরোহিত বিমল চক্রবর্তী বলেন, মকর সংক্রান্তিতে মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যা ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আবার শোনা যায় সূর্য এদিন নিজের ছেলে মকর রাশির অধিপতি শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। এই বিশেষ দিনে দেবতাদের সঙ্গে অসুরের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। অসুরদের বধ করে তাদের কাটা মুন্ডু পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মন্দিরা পর্বতে। সেজন্যেই অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয় এইদিনে, বলেই বিশ্বাস করেন সকলে।
'সংক্রান্তি' কথাটির অর্থ গমন করা। নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে
প্রবেশ করাকে সংক্রান্তি বলা হয়। শুভ কাজগুলি এদিন থেকেই শুরু হয় বলে সবাই বিশ্বাস করেন।