আজ ১৬ জানুয়ারী উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দশতলা বিশিষ্ট রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর। এনিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দেশে প্রথমবারের মত বিভাগীয় দপ্তরের জন্য অত্যাধুনিক ভবন নির্মিত হয়েছে রংপুরে। এর আদলে আগামীতে অন্যান্য বিভাগেও এমন ভবন নির্মিত হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এক ছাদের নিচে বিভাগীয় প্রশাসনের সব সেবা প্রাপ্তিতে জনভোগান্তি দূর হবে বলছেন সেবাগ্রহীতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত রংপুর বিভাগের উন্নয়নের অংশ বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারী রংপুর বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় সরকার। অনুমোদনের ছয় বছর পর ২০১৬ সালে দশ তলা বিশিষ্ট রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য তৎকালীন ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে‘ রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রংপুর অতি প্রাচীন জেলা। রংপুর বিভাগ ঘোষনা করা হলেও বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজিসহ অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য কোন কার্যালয় ছিল না। দশতলা বিশিষ্ট একটি বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণ করা হলে সরকারী কাজের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। একনেকে প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে গণপূর্ত অধিদপ্তর উত্তম হাজীরহাটে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ১৫ একর জমি নিয়ে রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদকালে ২০২১ সালের জুন মাসে বিভাগীয় সদর দপ্তরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এতে দশতলা বিশিষ্ট ভবনের পাশাপাশি ৭২০ আসনের ২ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হলরুম, ৮’শ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন সাবস্টেশন ভবন, ৫’শ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর, পাস্প হাউজ, ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধার, ৪০ হাজার গ্যালন ক্ষমতা সম্পন্ন ফায়ার জলাধার, গার্ডসেড ও গেট, বাউন্ডারী ওয়াল, আরসিসি রাস্তা, কম্পাউন্ড ড্রেন, মাটি ভরাট, আরবিকালচার, বহিঃস্থ বিদ্যুতায়ন, বহিঃস্থ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া দশতলা ভবনে ব্যাংক, পোস্ট অফিস, ক্যান্টিন, রান্নাঘর, সিকিউরিটি রুম, এসিল্যান্ড অফিস, ট্রেনিং রুম, ক্লাস রুম, ক্যান্টিন, ক্যাফে কর্নার, লাইব্রেরী, আর্কাইভ, মিটিং রুম রয়েছে। এছাড়াও এ ভবনে ৩টি প্যাসেঞ্জার ও একটি ফায়ার লিফট, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সোলার সিস্টেম, সিসিটিভি সিস্টেম, সার্ভার সিস্টেম, সাবমারসিবল ও সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে ভবন নির্মাণের পর বেঁচে যাওয়া আড়াই কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। আগামী ১৬ জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বিভাগীয় সদর দপ্তরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনকে ঘিরে বিভাগীয় সদর দপ্তরে পড়েছে সাজ সাজ রব। পুরো সড়কের দু’পাশে ফুলের গাছ ও বিভিন্ন রংয়ের পতাকা লাগিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ভবনের সম্মুখভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন ও অর্জন নিয়ে ছোট-বড় ফেস্টুন টাঙ্গানো হয়েছে। পুরো বিভাগীয় সদর দপ্তর জুড়ে বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ।
গণপূর্ত অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল গোফফার বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা একটি অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করতে পেরেছি। যা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি উদ্বোধন হলে বিভাগীয় প্রশাসনের কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে। ভবনের নকশা অনুযায়ী লিফট, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা সমকালকে বলেন, জেলা প্রশাসকের পুরাতন ভবনে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় হিসেবে দীর্ঘ ১১ বছর দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিভাগীয় প্রশাসনের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে দশতলা বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার ও বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, যুগ্ম নিবন্ধক, বিভাগীয় সমবায় ও বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়, ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস এর কার্যালয় থাকবে। ফলে একজন সেবাগ্রহীতার যাতায়াত খরচ কমে যাবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন একই স্থান থেকে। এ ছাড়া প্রতিটি দপ্তরের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভাব হবে। এ ভবনের পাশাপাশি বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি’র বাসভবন, বিভাগীয় সদর দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টার, টেনিস গ্রাউন্ড, মসজিদসহ আর বেশ কিছু ভবন তৈরী করা হবে।