করোনা সংক্রমণের চলমান এ সময়ে প্রতিরোধক টিকা দান অব্যাহত রয়েছে। সরকার দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য গণ-টিকাদান কর্মসূচি ও সম্প্রসারণ টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। কিন্তু তারপরও টিকাদানের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ষাটোর্ধ বয়সের মানুষদের টিকা বেশি প্রয়োজন। কারণ তারা বয়সের কারণে নানা রোগের আক্রান্ত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা টিকা পেলেও একই বয়সী প্রায় ১ কোটি শিশু-কিশোর টিকা পাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী টিকাদান শুরু হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, টিকা দানে যে কোনো বৈষম্য না হয়। টিকাদানে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বাংলাদেশের জাতীয় করোনা টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনাও ন্যায্যতার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য চিত্র।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৪১ লাখ ২৩ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৯০ লাখ ২১ হাজার মানুষ। অর্থাৎ ষাটোর্ধ ৫০ লাখ মানুষ এখনো টিকা পান নি। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ১২-১৭ বছর বয়সী শিশু কিশোর আছে ২ কোটি ১২ লাখ ৪৮ হাজার। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী ১ কোটি ১৬ লাখের কিছু বেশি। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশের ২০ লাখের মতো শিক্ষার্থী এখনো টিকা পায় নি। তাছাড়া ১২-১৭ বছর বয়সী প্রায় ৯৪ লাখ শিশু-কিশোর স্কুলে যায় না। এদের কিছু মাদ্রাসায় পড়া লেখা করে; কেউ বেকার ঘুরে বেড়ায় আবার কেউ শিশুশ্রমে জড়িত। এরা কবে টিকা পারে বা আদৌ পাবে কি না তা কেউ বলতে পারছে না। কারণ এদের সংঘটিত করা খুবই দুষ্কর।
স্বাস্থ্য বিভাগ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করার ব্যাপারে সবার আগ্রহ থাকলেও অনেকেই এ সুযোগ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ষাটোর্ধ বহু মানুষ এখনো প্রথম ডোজ না পেলেও তৃতীয় ডোজ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তিন শ্রেণীর মানুষ টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা; ১। যাদের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি, ২। যেসব জনগোষ্ঠী থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি ও ৩। আক্রান্ত হলে যাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। এসব বিবেচনায় শুরুতে ষাটোর্ধদের ও সম্মুখ-সারির কর্মীসহ আরো কিছু জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু টিকা দানে বৈষম্য বা ন্যায্যতা দিনে দিনে বাড়ছে। যা সংক্রমনশীল এ রোগকে নিয়ন্ত্রণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ছাড়া যানবাহনের চালক ও সহকারীদের কতজন টিকা পেয়েছেন আর কতজন পান নি তার কোনো হিসেব পরিবহন সংশ্লিষ্ট কোন সংস্থার কাছে নেই। তাদের কবে নাগাদ টিকা দেওয়া হবে বা তাদের জন্য বিশেষ কোনো টিকাদান কর্মসূচির আয়োজন করা হবে কিনা তাও কেউ বলতে পারছে না।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ টিকা দানের ক্ষেত্রে সবাইকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে না পারলে করোনা কাউকে রেহাই দেবে না। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় ২৮ হাজার ১২৯ জন মারা গেছেন। আমরা আর করোনার কারণে মৃত্যু দেখতে চাই না। তাই দ্রুততার সাথে দেশের সব জনগোষ্ঠীকে সমানভাবে টিকার আওতায় আনা জরুরি। এ ব্যাপারে সবাই সচেতন হবেন; এটাই আমাদের প্রত্যাশা।