কিছু সময় বিরতির পর রাজশাহীতে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। গত তিন দিনে সংক্রমিত হয়েছেন বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সর্বোচ্চ পাঁচ ভেরি ইনপটেন্ট পার্সন (ভিআইপি)। যাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিভাগীয় কমিশনারসহ মোট ৫ শীর্ষ ব্যক্তি। তবে সংক্রমণ বাড়লেও রোগটিতে মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। রোগটির উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আর একই সময় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রাজশাহীতে করোনায় সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে শনাক্তের হারের প্রায় তিনগুণ। এ তথ্য সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টার। এর আগে বিগত সপ্তাহেও রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল।
এদিকে গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) নমুনা পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন- রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফর উল্লাহ ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। তবে, তাদের দুইজন এখনও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা নিজ নিজ বাসভবনেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী।
এর আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) প্রকৌশলী এনামুল হক এবং রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের আয়েন উদ্দিন এমপি। গত শুক্রবার মেয়র লিটন ও সাংসদ এনামুল হক এবং গত শনিবার এমপি আয়েন উদ্দিন করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে সংক্রমিত হওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হন। রাজশাহীর শীর্ষ এসব অভিভাবকগণ বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে নিজ নিজ বাসাতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রামেক হাসপাতালের করোনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে দুই জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১০৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ৩৩ জন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার ২০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২, নওগাঁর ৬, নাটোরের ১, পাবনা ৩ ও কুষ্টিয়ার ১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ৬ জন। বাকিরা রোগটির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ল্যাবে ১৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা সকলেই রাজশাহীর বাসিন্দা। অর্থাৎ একদিনেই ৭৭ জনের দেহে করোনা শনাক্তের মধ্য দিয়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রাজশাহীতে সংক্রমণের হার হয়েছে ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। যা গত সপ্তাহের চেয়ে শনাক্তের হারের প্রায় তিনগুণ। আর সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি খুব দ্রুত ভয়াবহ রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন এখানকার চিকিৎসকগণ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধের ৪র্থ দিন সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীতে বেশির ভাগ মানুষকেই মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। ফলে কিছুক্ষণ পর পর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার কিংবা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসও এদিন তেমনভাবে চোখে পড়েনি। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো বাংলাদেশেও ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) শুরু হয়েছে। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমনভাবে মাঠে দেখা যায়নি।
এই বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা না গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। হাসপাতালের ওপর আবারও চাপ বাড়বে। তাই এখনই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে আগের ন্যয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী।