অস্ত্রপচারের সময় চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের ডান হাতের কুনইএর হাড়ের জয়েন্ট ছুটিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়ার পর ফরিদপুরের বেসরকারি আরামবাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এ আদেশ দেন ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দিকুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিভিল সার্জন শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লা এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত আরামবাগ হাসপাতালে যান। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন, ফরিদপুর সদরের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফতেমা করিম।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ১০ শয্যার ওই হাসপাতালে যে সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স থাকা প্রয়োজন তা পাওয়া যায়নি। ওই সময় হাসপাতালের মালিক পক্ষ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপস্থিত ছিলেন, ম্যানেজার আলী চৌধুরী। পরে আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক মো. জোবায়েরকে ফোন দিয়ে ডেকে আনা হয়।
ম্যানেজার আলী চৌধুরী জানান, এ হাসপাতালে শুধুমাত্র আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক নিয়োগপ্রাপ্ত, আর কোন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেই।
অথচ ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করার কথা। ছযজন নিয়োগপ্রাপ্ত সেবিকা থাকার কথা থাকলেও তিনজন নিয়োগ প্রাপ্ত সেবিকা পাওয়া যায়।
বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, নার্স ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় ওই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন সিভিল সার্জন। যে সব রোগীরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের মধ্যে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া এবং যারা অসুস্থ তাদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপালে স্থনান্তরের নির্দেশ দেন সিভিল সার্জন।
প্রসঙ্গত ওই হাসপাতালে গত ১৩ ডিসেম্বর অস্ত্রপচারের মাধ্যমে একটি ছেলে শিশুর জন্ম দেন মৌসুমি আক্তার ওরফে মুক্তা নামে এক নারী। মৌসুমি শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা পোল্টি ফিড ব্যাবসায়ী আরিফুল ইসলামের স্ত্রী। এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় সন্তান।
গত মঙ্গলবার আরিফুল ইসলাম ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের নিকট ‘আরামবাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের রোগীর প্রতি অবহেলার দরুণ ক্ষতি হওয়ার প্রসঙ্গে’ একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত ওই অভিযোগ বলা হয়, ‘১৩ ডিসেম্বর আরামবাগ হাসপাতালে সিজারের সময় ডাক্তারদের অবহেলা বা গুরত্বতা না থাকায় আমার নব জন্ম নেওয়া শিশু বাচ্চার হাত অতিরিক্ত টান দিয়ে হাতের কনুই থেকে হাড্ডির (হাড়) জয়েন্ট ছুটিয়ে ফেলে।’
লিখিত ওই অভিযোগে হাসপাতাল কতর্ৃৃপক্ষ ও চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার বাচ্চার শারীরিক নির্যাতন, আমাদের আর্থিক ও মানষিক নির্যাতনের জন্য উল্লিখিত হাসপাতাল ও ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
আরিফুল ইসলাম বলেন, ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে এ অস্ত্রপচার করা হয়। অপারেশ থিয়েটারে নবজাতক অর্ত চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। ওই সময় আমার স্ত্রী শুনতে পান চিকিৎসক শারমিন সুলতানা জুই আয়াকে নবজাতকের ডান হাত মালিশ করার পরামর্শ দেন। পরে এক্সরে করে দেখা যায় শিশুটির হাতের কনুইর হাড়ের জয়েন্ট ছুটে গেছে। শিশুটি বর্তমানে ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত হেলথ এ- হোপ সেন্টারে চিকিৎসক অধ্যাপক সানোয়ার ইবনে সারামের অধিনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ অভিযান চালানো হয় আরামবাগ হাসপাতালে। তিনি বলেন, পরিদর্শনকালে ওই হাসপাতালের নানা অব্যাবস্থাপনা চোখে পড়ে। চিকিৎসক শারমিন নিজে বিএসএস ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালের চিকিৎসক না হয়েও হাসপাতালের নাম ফলকে তার এ পরিচিতি লিখিছেন। এ ছাড়া ফার্মাাসিষ্ট রাজিব হোসেন নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযোগকারী আরিফুল আলমকে শিশুটির হাতের এক্সরে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারেন।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, আরামবাগ হাসপাতালের কর্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চালাতে চিকিৎসক ও নার্সসহ যে পরিমান জনবল ও সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন সে শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালটি বন্ধ থাকবে।
জানতে চাইলে আরামবাগ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে কিছু সমস্যা থাকায় সিভিল সার্জন হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আমাদের ঘারতি পূরণ করে পুণরায় হাজসপাতাল চালুর উদ্যোগ নেব।
শিশুটির বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে। কি ঘটেছে তা আপনারা জানেন। আগামীতে এ ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।