সাতক্ষীরা তালায় নির্বাচন অফিসে ভোটের ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় রাখার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যালট পেপার সাতক্ষীরা নির্বাচনী ট্রাইবুনালে পাঠানোর সময় বস্তার মুখ খোলা পেয়ে প্রতিবাদ জানান সরুলিয়া ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
জানা যায়, বিগত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোট নিয়ে আদালতে পূন:গণনার আদেশ চেয়ে মামলা করেন সরুলিয়া ইউনিয়নের নিকটতম পরাজিত প্রার্থী আবদুর রব পলাশ। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের নির্দেশে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সরুলিয়া ইউনিয়নের ব্যালট পেপার ভর্তি ৫টি বস্তা ষ্টোর রুম থেকে বের করার সময় একটি বস্তার মুখ খোলা ও কিছু ব্যালট পেপার ছড়ানো ছিটানো পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, ব্যালট পেপার ভর্তি মুখ খোলা বস্তা গাড়িতে তোলার অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই জানান, আমার ভোট নষ্ট করার জন্য কুট কৌশলে বস্তা খুলে ব্যালট পেপার নষ্ট করা হতে পারে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাহুল রায় জানান, অফিসের ষ্টোর রুমে সিলগালা অবস্থায় অনেকদিন থাকায় বস্তার মুখ খুলে যেতে পারে। পরে বস্তার মুখ বেঁধে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়েছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলেও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, খবর পেয়ে গিয়ে দেখি একটি বস্তা খোলা ও বেশ কিছু ব্যালট পেপার ছাড়ানো-ছিটানো ছিলো। এই অবস্থায় বস্তা গাড়িতে তোলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বস্তা সিলগালা থাকার কথা। আমি এর প্রতিবাদ করেছি।
এদিকে সাতক্ষীরার তালার সরুলিয়া ইউনিয়নের ব্যালট পুন:গণনা কার্যক্রমে বাঁধাদানের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বিশ^াসের পুত্র আবদুর রব পলাশ। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি তালা উপজেলার ৩ নং সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলাম। গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে আমি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছি।
ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোট গণনায় আমি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুপ আচরণের শিকার হয়েছি। কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্ট বের করে দেওয়া, কোন কোন কেন্দ্রে ফলাফল শীটে অগ্রীম স্বাক্ষর করে নেওয়া, আবার কোন কেন্দ্রে একেবারেই ফলাফল শীটে স্বাক্ষর না নেওয়া ও গণনায় কারচুপি করা হয়।
এসব ঘটনায় আমি সাতক্ষীরা নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করি। মামলা নং ২/২১। মামলা শুনানী শেষে বিচারক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ফরাজী গত ৫ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে তালা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ব্যালট পেপার আদালতে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মতে, ২০ জানুয়ারি তালা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ব্যালট সাতক্ষীরা নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল আদালতে নিয়ে আসার সময় সকাল ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চেয়ারম্যান আবদুল হাই ১৫-২০ জন লোক নিয়ে নির্বাচন অফিসের মধ্যে থাকা ব্যালট রাখা বস্তাগুলো টানাহেচড়া করেন। ভোট
পুন:গণনার আদালতের নির্দেশনা পালন বাঁধাগ্রস্ত ও বিতর্কিত করার পায়তারা চালান। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার জরুরী ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারপর ব্যালটের বস্তাসহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি একটি মাইক্রোবাযোগে নিয়ে সাতক্ষীরা আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা। ব্যালটের পাঁচটি বস্তা আদালতে নিয়ে আসার পর আদালত বস্তার মুখ খোলা দেখে দুপুর ৩টার দিকে সেগুলো তালা নির্বাচন অফিসে ফেরৎ দেন আদালতের বিচারক। ভোট পুন:গণনার কাজটি বাঁধাগ্রস্ত করতে নির্বাচিত কমিশন ঘোষিত চেয়ারম্যান আবদুল হাই আদালতে একের পর এক সময়ক্ষেপন করছেন। ভোট পুনরায় গণনায় এই প্রার্থীর সমস্যা কোথায় সেটা জানতে চায় সরুলিয়া ইউনিয়নবাসী। প্রকৃত অর্থে, সে ভোটে জয়লাভ করেনি। কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। আমি বিষয়টি সমাধানের জন্য আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ সময় ভোট পুন:গণনায় যাতে কোনভাবে বাঁধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য তিনি প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।