জনপ্রতিনিধিরা মূলত জনগণের প্রতিচ্ছায়া। তাঁরা দেশের কল্যাণে, সমাজের কল্যাণে কাজ করবেন এজন্যই জনগণ তাঁদেরকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধিরা যতোটা না জনগণের তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি নিজের। অর্থাৎ আত্মস্বার্থ হাসিলের জন্যই সে জনগণকে ব্যবহার করেন। জনগণ তাঁদের দ্বারা খুব কমই উপকৃত হন।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে লুটপাটের খবর নতুন নয়। কাবিখা, কাবিটা, টিআর ইত্যাদির নামে চলে অবাধে টাকা লুণ্ঠন। এভাবে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা চলে যাচ্ছে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর হাতে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বার্থে এসব প্রকল্প প্রণয়ন করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন, এমন অভিযোগ অনেক পুরনো।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে (কাবিটা/টিআর) ১৪টি প্রকল্পে সাবেক ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও স্থানীয় ব্যক্তিরা কাজ না করিয়ে ৩২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বুড়িরচর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। আরো গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, প্রকল্পের অর্ধেক টাকা দিতে হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানকে এবং ২০ শতাংশ দিতে হয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে।
ঠিক একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নে। গত বুধবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এলাকার কিছু মানুষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যে পাহাড়পুর গ্রামে বাস্তবায়নাধীন কাবিখা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারা চলছে।
এগুলো আসলে নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রকল্পের নামে এভাবে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে বহু পুরনো। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পকেট ভারী করতে ও দলের লোকদের কর্মসংস্থান করতে গিয়ে এভাবে নানা প্রকল্প দেখিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা লুটপাটে অংশ নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। বাস্তবে কোনো উন্নয়নকাজ হয় না। ভুয়া উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করা হয়। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তল্পিবাহকদের যুক্ত করা হয়। এভাবেই দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভারী হয়। কিন্তু বাস্তবে উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও কোথাও লাগে না। আর এসবের নেপথ্যে ইন্ধন থাকে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার।
এই ধরণের দুর্নীতি, অনিয়ম আসলে কোনভাবেই কাম্য নয়। এই ধরণের অপকর্মের কারণেই আমাদের দেশ পিছিয়ে আছে। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাপ্য থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। এ ধরনের লুটপাটের প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে যে দুর্নীতি স্থানীয় পর্যায়ে হচ্ছে, তা বন্ধে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে এটাই প্রত্যাশা।