অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার পর তার লাশ বস্তায় ভরে গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় ফেলে যায় স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮)। এই কাজে নোবেলকে সহায়তা করেছিল তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ (৪৭)। ৩ দিনের রিমান্ডের প্রথমদিন জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে নোবেল জানিয়েছেন, শিমুকে হত্যা করা তার পরিকল্পনা ছিল না। সকালে দুইজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে তিনি শিমুকে থাপ্পড় দেন। এতে শিমু তার ওপর চড়াও হন। ক্ষিপ্ত হয়ে শিমুর গলা চেপে ধরলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর বন্ধু ফরহাদকে বাসায় ডোকে স্ত্রীর লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন নোবেল। নোবেল জানান, শিমু মারা গেছে বোঝার পরই বন্ধু ফরহাদকে বাসায় ডেকে আনেন তিনি। ছেলে-মেয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাশটি সরাতে চেয়েছিলেন তিনি। নোবেল আর ফরহাদ মিলে শিমুর মরদেহ বাসা থেকে বের করার আগে বাসার দারোয়ানকে নাশতা আনতে পাঠিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে, তারা বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো করতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। একপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল সুইচও বন্ধ করে দেন। পরে বস্তায় ভরা শিমুর মরদেহ গাড়িতে তোলা হয়। এদিকে, গ্রেফতার নোবেলের বন্ধু ফরহাদ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, হত্যার আগে তিনি কিছুই জানতেন না। বন্ধুর ফোনে সাড়া দিয়ে ওই বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। মামলা তদন্তের বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস ছালাম বলেন, নোবেল ও তার বন্ধুকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নোবেল অকপটেই স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করছেন। পুলিশ জানায়, রোববার সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে ফোনকলে করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে মরদেহ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা মরদেহ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যান। আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩শ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহ ফেলে চলে যান তারা। সেদিন রাতেই শিমুর ভাই হারুনুর রশীদের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু ফরহাদকে। গত মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) চুন্নু মিয়া। শুনানি শেষে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে গ্রেফতার করা হয় শিমুর স্বামী নোবেল ও তার ফরহাদকে। মরদেহ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ এ হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেন। অথচ গত রোববার সন্ধ্যায় শিমুকে না পাওয়ার কথা উঠলে স্বামী নোবেল দাবি করেন, তার স্ত্রী সকালে বাসা থেকে বের হন, এরপর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন রাতেই নোবেল কলাবাগান থানায় স্ত্রীর সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।