কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ২৮ইঞ্চি দৈহিক উচ্চতার এক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় জেলা জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শারীরিক উচ্চতায় ছোট হলেও নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্য প্রার্থীদের মতই। তবে ভোটারদের কাছে উচ্চতা নয় যোগ্যতাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শারীরিক উচ্চতাকে মাপকাটিতে মাপছে না ভোটাররা।
আগামী ৩১ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ষষ্ঠ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে অবশিষ্ট ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ২৮ইঞ্চি উচ্চতার সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোশারফ হোসেন মশু। তার প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তার নির্বাচনী এলাকায় ভোটাররাই নিজেদের টাকা দিয়ে মশুর নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। মোশারফ হোসেন মশু নির্বাচিত হলে পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী আমেরিকান লেখিকা মার্জোরি কিনান রাওলিংসের লেখা ‘এ মাদার ইন ম্যানভিল’ গল্পের ‘সাইজ ডাজ নট ম্যাটার’ উক্তির মতোই হবে।
ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে বাগভান্ডার কদমতলা গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাব্বিশ বছর বয়সী মোশাররফ হোসেন মশু। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিনি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ হবার পর ভ্যানগাড়ি প্রতীক পেয়েছেন। অনেকেই ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে সাধারণ মানুষের কথা ভুলে যায়, মেলে না কাঙ্খিত সেবা। এছাড়াও প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। সে যেন সমাজের মূলধারায় আসতে পারে তাই এলাকাবাসী মশুকে প্রার্থী করেছেন নিজ উদ্যোগে। ফলে এবার একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী মশুর ছোট কাঁধে জনসেবার গুরু দায়িত্ব তুলে দিতে চান ভোটাররা। তার নির্বাচনী প্রচারণাও স্থানীয়রা করছেন বিনা পয়সায়। মশু নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও সাধারণ মানুষ ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে না। তবে ভোটারদের কাছে উচ্চতা দেখে নয় যোগ্যতা দেখে ভোট দিতে চান ভোটাররা।
বাগভান্ডার কদমতলা এলাকার তালেব বলেন, একজন দরিদ্রের কষ্ট অন্য দরিদ্রই ভালো বোঝেন। তাই আমরা মশুকে মেম্বার প্রার্থী করেছি। এখন মানুষ যাকে ভালোবাসবে তাকেই ভোট দিবেন।
ভোটার রেশমা বেগম বলেন, লম্বা-ভুড়ি ওলা মানুষক তো ভোট দিয়া দেখছি। এবার খাটো মানুষ দাঁড়াইছে তাতে কী হইছে। যোগ্য ব্যক্তিক দেহি ভোট দেমো।
লিটন মিয়া বলেন, আমগো ভোটারের কাছে প্রার্থী খাটো কি লম্বা কি? সাইজ দেহি তো ভোট দিব না। যোগ্য দেখিয়া ভোটটা দিমু।
লিপি বেগম বলেন, মশুর মা বেঁচে নেই। এতিম দরিদ্র ছেলে। এলাকাবাসী ভালোবেসে তাকে প্রার্থী করেছি। মশুর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনার পোষ্টার, লিফলেটসহ সব খরচই এলাকার মানুষ দেই। এলা দেখি ৩১তারিখের ভোটে কী হয়?
সাধারণ সদস্য প্রার্থী মোশারফ হোসেন মশু বলেন, আমি নির্বাচন করবো এমন চিন্তা ছিল না। এলাকার মানুষই আমাকে ভোটে দাঁড় করিয়েছে। তাই নির্বাচিত হলে জনসেবার মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। গরিবের হক বিনা পয়সায় গরিবদের ঘরে ঘরে পৌঁছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তিনি।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আব্দুল মোত্তালেব বলেন, আমরা অন্য প্রার্থীরাও তাকে হেয় বা ছোট করে না দেখে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে গণ্য করে মাঠে প্রচারণা করছি। এখন ভোটাররা যাকে ভালোবাসে এবং যোগ্য মনে করবে তাকেই ভোট দিবে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনে অংশ নেবার সমান অধিকার প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। সবাই বিধি মোতাবেক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও আইনশৃংখলা বিঘ্নিত হয়নি হবার খবর পাইনি।