সীতাকু-ের বাড়বকু-, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া ও মুরাদপুর ইউনিয়নে সমুদ্র উপকূলে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় সাগরের বালু উত্তোলন করে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব চলছে। সাগর থেকে বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বড়বড় পাইপের মাধ্যমে বালি উত্তোলনে একদিকে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে কয়েক হাজার একর ফসলি কৃষি জমি ধ্বংস হচ্ছ। দীর্ঘদিন ধরে রাঁতের আঁধারে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় উপকুলীয় এলাকায় কৃষি জমি ভরাট করে কুমিরা এলাকায় মাদার স্টিল ও সোনাইছড়ি চৌধুরী ঘাঁটা এলাকায় একটি রিরোলিং মিল এবং বাঁশবাড়িয়া এলাকায় বসুন্ধরা, বাড়বকু- এলাকায় ক্যাপিটাল গ্যাস পেট্রোলিয়াম, ইউনি গ্যাস পেট্রোলিয়াম, বিএম এনার্জি, জেএম আই, এনবি স্টিল সহ প্রায় ১০/১৫ টি এলপিজি গ্যাস পেট্রোলিয়াম কারখানা গড়ে উঠেছে।
জানা যায়, এনবি স্টিলের সত্ত্বাধিকারী তসলিমা উদ্দিনের বর্তমান মালিকানাধীন ক্যাপেটিল নামে এই প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছর যাবৎ বাড়বকু- সাগর উপকূল এলাকায় এলপি গ্যাস কারখানা করার নামে উপকুলীয় বন কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। তাছাড়া বিশাল এলাকাজুড়ে ফসলি জমির চারপাশে বাঁধ দিয়ে বড়বড় পাইপের মাধ্যমে সাগরের বালু উত্তোলন করে ভরাটের কাজ করছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ক্যাপিটেল নামে এ প্রতিষ্ঠানটি বিশাল আকৃতির একটি খাল ভরাট করে দেয়াল দিয়ে সাগরের ও এলাকার পানি নিস্কাশন বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে আইন-শৃঙ্গলা বাহিনী দিয়ে হয়রানি করেন। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা ও জরিমানা করেছে। কিন্তু এরপরও তারা উচ্চ মহলের দোহাই দিয়ে সরকারি সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে রাতের আঁধারে বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। উপজেলার বাড়বকু- সাগর উপকূল এলাকায় ২০১৯ সালে ক্যাপিটাল এলপি গ্যাস স্থাপপনের নামে বেডিবাঁধের পশ্চিম পাশে জমি ক্রয় শুরু করেন। এরপর সরকারি উচ্চ মহলের নাম বিক্রি করে দিনের পর দিন উপকুলীয় বনভূমির বন কেটে সাবাড় করে তাঁরা বন বিভাগের জায়গা দখল করে স্কেভেটর দিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরী করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি কারখানা স্থাপন না করে জমি বিক্রি ও বালু উত্তোলনে ঠিকাদারী কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। তারা গত বছরেও একশো একর কৃষি ও উপকুলীয় ভূমি সমুদ্রের তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করেই ভরাট করেছিল। তাঁরা আবারো গত কয়েকদিন ধরে বড় আকারে সাগরে ড্রেজার নামিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
সরেজমিনে সমুদ্র উপকুলে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের পূর্বপাশ ঘেঁষে প্রায় ২শ শতক কৃষি জমিতে মাটি কেটে চারপাশে পুকুরের পাড়ের মতো বাঁধ দেওয়া হয়েছে এবং মাঝখানে বিশালাকারে গর্ত করা হয়েছে। উপকুলে ৩ টি স্কেভেটর দিয়ে চালানো হচ্ছে মাটি খননের কাজ। একইসাথে সাগর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বেঁডিবাধ এলাকা থেকে প্রায় ১ হাজার মিটার পশ্চিমে সাগরে লম্বা জোড়া পাইফ বসিয়ে রাতের আঁধারে বালি উত্তোলন করছে। সাগরেও নামানো হয়েছে ২ টি শক্তিশালী বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার। এসব কিছু দেখভালে নিয়োজিত রয়েছে বেশকিছু শ্রমিক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ও চুক্তিকৃত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা যৌথভাবে বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার সচেতন মহলের অভিমত, ক্যাপিটাল এলপি গ্যাস কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই এর আগেও অবৈধভাবে সাগর থেকে বালু উত্তোলন করে ফসলি জমি ভরাট করেছিল। এবারেও ক্যাপিটাল একই কায়দায় বালু উত্তোলন করতে যাচ্ছে চুক্তিকৃত অপর একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। সরকারি উচ্চ মহলের ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান না করে বালু উত্তোলনের মত ঠিকাদারি কাজ করছে। আর এসব কাজে সহযোগিতা করছেন এলাকার প্রভাবশালী মহল। ক্যাপিটালের উপর দিয়েই পাইফ বসানো শেষ হয়েছে। সাগর থেকে বালু উত্তোলন তারা করলেও এর মাশুল দিতে হয় উপকুলের জনগণকে। সমুদ্রের গভীরতা বেড়ে গেলে মাছ ধরা দূরে থাক,কেউ সাগরের তীরেও যেতে ভয় পায়। বাঁশবাড়িয়া এলাকায় গত বছর সমুদ্র উপকূলের সৈকতে বেড়াতে গিয়ে ৫ জন পর্যটক সমুদ্রের গভীরে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া লম্বা পাইফের কারণে স্থানীয় কৃষকরা গবাদিপশু ছরাতে পারছেনা। কোম্পানির লোকজন আশপাশে কাউকে যেতে দিচ্ছে না। চারদিকে তারা ঘেরাও করে রেখেছে। কয়েক বছর পূর্বে সমুদ্র উপকূলে শতশত কেওড়া গাছের বাগান ছিল। বর্তমানে সবগুলো কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। পুরো সমুদ্র উপকুলটা তারা গিলে খাচ্ছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না কারণ তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে আইন-শৃঙ্গলা বাহিনী দিয়ে শায়েস্তা করছে। এ বিষয়ে এনবি স্টিলের সত্ত্বাধিকারী তসলিমা উদিন আমার সংবাদকে বলেন, আমি বর্তমানে বালু উত্তোলনের কাজ বন্ধ রেখেছি। তবে অনুমতি নিয়ে আগামীতে বালু উত্তোলন কাজ করব। অপরদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকু- উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর প্রথমে বনবিভাগকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বালি উত্তোলন কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কাজ বন্ধ না করায় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে সাগরের বালু উত্তোলনের পাইপ কেটে দিয়েছে।