আবারো করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। ভ্রমমাণ আদালত তৎপর হলেও মানুষ নিজ স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ বাড়ছেই, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যু তালিকা। ২০২০ সালের মার্চে প্রথম সনাক্ত হওয়া করোনায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ জন তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ২০৯ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯ জন। যারা টিকা নেন নি এবং যাদের বয়স বেশি ও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ অসংক্রমন ব্যাধি বা জটিলতা আছে, তারা বেশি সংক্রমণ ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য সরকার প্রথমে ৬০ বছর বেশি বয়সীদের জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে তা ৫০ বছর করা হয়েছে। প্রথম ডোজ, দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি চলছে বুস্টার ডোজ দেওয়া।
জাতীয় করোনা টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় পর্যায়ক্রমে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে বলে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও গত ২১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু ১০ শতাংশ মানুষকে কেন টিকা দেওয়া হবে না বা কীভাবে ও কাদের বাদ দেওয়া হবে তা স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায় নি। অবশ্য গত বছরের মাঝামাঝি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, বিশে^র মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে দ্রুততম সময়ে টিকার আওতায় আনতে হবে। সেটা সম্ভব হলে রোগের তীব্র উপসর্গ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। হাসপাতালে রুগী ভর্তিও কমবে।
বাংলাদেশে উপহার; কেনা ও অনুদানের মাধ্যমে টিকা আসছে। এ পর্যন্ত টিকা এসেছে মোট ২৪ কোটি ১৪ লাখ ডোজ। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ মিলে ১৫ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আছে ৯ কোটি ডোজ টিকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩ লাখ ১৭ হাজার। এর মধ্যে ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার। এদের প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেওয়া চলছে। ৬০ ঊর্ধ্ব ৪০ লাখ মানুষ এখনো এক ডোজ টিকা পান নি। এমন সময় ৮০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার ঘোষণায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকা দিলে মোট ১১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার মানুষ টিকা পাবে। আর ১২ থেকে বেশি বয়সী ১ কোটি ৩৯ লাখ ২৪ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া থেকে বিরত রাখবে স্বাস্থ্য বিভাগ। অবশ্য টিকা প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করছে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া। সরকার বারবার বলছে, প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ করা হবে এবং দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। কিন্তু হঠাৎ কেন ৮০ শতাংশের জায়গায় ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো। এক দিকে অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষা করছেন না, সেখানে বিরাট অংকের জনগণ যদি টিকা না পায় তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।