বাংলাদেশের সড়কগুলোতে ফাঁদ পেতে বসে আছে মৃত্যুদূত। প্রতিনিয়ত সড়কে ঝরে পড়ছে মূল্যবান জীবন। সড়ক দুর্ঘটনায় কত পরিবার যে পথে বসেছে তার কোনো হিসাব নেই। অনেকেই বলে থাকেন, ‘দুর্ঘটনা হঠাৎ করেই ঘটে। কিন্তু সব দুর্ঘটনাকে কি নিছকই দুর্ঘটনা বলা চলে? ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে না চলা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলো কি নিছকই দুর্ঘটনা?
এই সড়কেই ঝরে পড়েছিল চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের জীবন। নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, ‘দুর্ঘটনার দায় চালককেও নিতে হবে। যেকোনো দুর্ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা নয়। এসব ঘটনায় অনেক মানুষের দায় ও দায়িত্ব আছে। ’ আদালতের এই রায়ের মধ্য দিয়ে দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলেও তা কি পরিবহনকর্মীদের মনে একটুও দাগ কাটতে পেরেছে? বিষয়টি আমলে নিলে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা কী করে ঘটে?
দুই বাসের রেষারেষিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী রাজীবের মৃত্যুর ঘটনা ভুলেনি কেউ। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে একই ধরনের ঘটনায় রাজধানীতে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর প্রাণ যায়। ২০১৯ সালে বসুন্ধরা গেটে বাসচাপায় প্রাণ যায় বিইউপির এক শিক্ষার্থীর। এক টাকা ফেরত চাওয়ায় চলন্ত বাস থেকে যাত্রীকে লাথি মেরে ফেলে হত্যা করে হেল্পার। গত নভেম্বরে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে চলন্ত বাস থেকে ১০ বছরের মেয়েশিশুকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচ টাকা ভাড়া কম দেওয়ায় শুরু বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। একপর্যায়ে কন্ডাক্টর যাত্রীকে ঠেলে ফেলে দিলেন চলন্ত বাস থেকে। প্রাণ হারালেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মগবাজার মোড়ে গাজীপুরগামী একই পরিবহনের তিনটি বাস নিজেদের মধ্যে পাল্লা দেওয়ার সময় দুই বাসের মধ্যে পড়ে মাস্ক বিক্রেতা এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসের ধাক্কায় এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, মগবাজার মোড়ে দুর্ঘটনার পর বাস দুটি আটক করলেও চালকসহ অন্য কর্মীরা পালিয়ে গেছেন। জয়কালী মন্দিরের ঘটনায় অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেল্পারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ীতে সিএনজি অটোরিকশা চাপা দেওয়া বাসটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন।
এটি খুবই দুঃখজনক যে, উচ্চতর আদালতের নির্দেশনা গণপরিবহন আইনÑকোনো কিছুই পরিবহনকর্মীদের আচরণে কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না। বদলাচ্ছে না তাঁদের আচরণ। ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ তো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। থেমে নেই বাস থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার নামে এই ধরণের হত্যাকান্ড থামাতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।